শালিখা (মাগুরা) প্রতিনিধি : বর্তমান প্রজন্মের মানুষ হাজারো রকম বিনোদনের ভিড়ে কখনো চোখেই দেখেনি দড়ি দিয়ে মাটির গভীর থেকে পানি টেনে তোলার অপরূপ দৃশ্য। আজকাল হয়তো আর কেউ সেসব গল্পও শোনে না, গ্রামের শ্যামল রমণীরা পানির জন্য কুয়ার পাশে কিভাবে লাইন ধরে দাড়িয়ে থাকতো।
প্রয়োজন হারানোয় হাজার বছর ধরে মানুষের তৃষ্ণা মিটিয়ে আসা বাঙালী সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান এই ইঁদারা বা কুয়া মানুষের স্মৃতি থেকেও আজ হারিয়ে গেছে। তবু কেউ কেউ এখনো স্মৃতি হাতড়ে সেই আগের দিনের ধ্যান ধারণা আকড়ে ধরে শল্য চিকিৎসা অথবা অন্য কোন প্রয়োজনে খুজতে যান দূরের কোন গ্রামে কুয়োর পানি। ইঁদারা পাওয়া দুষ্কর হলেও এখনো পুরাতন মানুষেরা মনে করেন সবচেয়ে বিশুদ্ধ পানির আঁধার হলো ইঁদারা বা কুয়া।
বিলুপ্ত হওয়া প্রাচীন ঐতিহ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম কুয়া বা ইন্দারা যা এক সময় পানের জন্য সুপেয় পানির একমাত্র উৎস ছিল। ১০-১৫ ফুট গোল গর্ত করে প্রায় ৫০-৬০ ফুট নিচ পর্যন্ত(বরেন্দ্র অঞ্চলের হিসাব) মাটি খুড়ে তৈরি করা হতো কুপ বা ইন্দ্রা বা ইঁদারা।
নব্বইর দশক পর্যন্ত অনেক এলাকার মানুষ তাদের সুপেয় পানির চাহিদা পূরণ করতো গভীর ইঁদারা থেকে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা রাজাকারদের সহযোগিতায় অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানূষদের ধরে নিয়ে বড় কুয়া বা ইন্দারায় ফেলে দিত। ফলে সেই সব ইন্দারা বা কুয়া আজও বধ্যভ‚মি হয়ে আছে। যদিও সেইসব কুয়া এমনিতেই ভরাট হয়ে গেছে। এমনই এক বধ্যভ‚মি ইঁদারা রয়েছে অসংখ্য মানুষের নৃশংস হত্যার সাক্ষ্যি হয়ে আজো দৃশ্যমান রয়েছে মাগুরার শালিখা উপজেলার প্রাণকেন্দ্র আড়পাড়া ডাকবাংলো প্রাঙ্গনে। এর ভেতরটা মাটিতে ভরাট হয়ে গেছে। তবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আরো অনেকগুলো ইঁদারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।