মণিরামপুর প্রতিনিধি : প্রতি বছরের বর্ষা মৌসুমে খাল বিল পানিতে ভরে ওঠে।তবে এ বছরের বর্ষায় তেমন বৃষ্টির দেখা নেই। তারপরও মণিরামপুরের মনোহরপুর ইউনিয়নে কুমারঘাটা বাজারে নৌকার হাট ক্রেতা বিক্রেতাদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে।প্রথমে চাহিদা কম থাকায় গেল কয়েকদিনের শ্রাবণের ধারার বৃষ্টির পানিতে নিচু জায়গায় পানি জমতে শুরু করেছে।তার জন্য নৌকার চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বেশ জমে উঠেছে নৌকার হাট।সকাল থেকে সন্ধ্যা পযন্ত ক্রেতা বিক্রেতাদের উপস্হিত ও চোখে পড়ার মত। প্রতি বছরের বর্ষায় খাল-বিল পানিতে টইটম্বুর হয়ে থাকতো। কিন্তু এখন তার উল্টো। মণিরামপুরের কুমারঘাটা য় ব্যস্ত সময় পার করছেন নৌকার কারিগররা। দিনরাত হাতুড়ি-বাটালের ঠুকঠাক শব্দে মুখর মনোহরপুর ও কুমারঘাটা ,কপালিয়া সহ বিভিন্ন এলাকা। বর্ষা মৌসুমে নিচু এলাকার লোকজনের যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে ওঠে নৌকা।
চারদিকে বর্ষায় যখন রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়, তখন নৌকা, কলাগাছের ভেলা হয়ে ওঠে পারাপারের ভরসা। মনিরামপুরের মনোহরপুর গ্রামের মো আশরাফ হোসেনও মো শাহাজাহান মিস্ত্রি ডোঙা তৈরির কাজ করেন ৪০ বছর। প্রথমদিকে বাড়ি বাড়ি কাজ করতেন তিনি। এরপর ২৭ বছর ধরে কাজ করছেন কুমারঘাটা বাজারে। বুধবারে কথা হয় আশরাফ সাথে।
তিনি বলেন, বংশ পরস্পরায় একাজ করছি। একটা ছেলে তাকেও শিখাইছি। ১০ টাকা থেকে শুরু করে এখন ৬০০ টাকা মজুরি পাই। সারা বছর কাজ চলে। বসে থাকা লাগে না। খুলনার কয়রা থেকে কুমারঘাটা বাজারে নৌকা বানাতে এসেছেন মুজিবর রহমান,পাচাকড়ি থেকে আসা জবেদ আলী। তিনি বলেন, তিনজনে মিলে দিনে একটা ডোঙা তৈরি করি। এক হাজার টাকা থেকে ৮০০ টাকা হাজিরা পাই। ছয় মাস এখানে করি। বাকি সময় মংলায় কাজ করি। এখন বর্ষা মৌসুম।
মনিরামপুরের খাল বিলে পানি তেমন নেই।তার পরও নৌকার বেচা কেনা কমতি িেন। পানি জমে ফেঁপে উঠেছে এই অঞ্চলের মাছের ঘেরগুলো। এরই মধ্যে ধুম পড়েছে ডোঙা তৈরির। মাছের ঘেরে খাবার নেয়া, বিলে মাছধরা, লোক পারাপারসহ নানা কাজে ব্যবহৃত হয় ডোঙাগুলো। ডোঙা তৈরিতে অতি পরিচিত এখানকার কুমারঘাটা বাজার। বাজারে ২৫-২৮টি ডোঙা তৈরির ঘর রয়েছে। যেখানে ব্যস্ত সময় খাটাচ্ছেন ৬০-৭০ শ্রমিক।
এই বাজার ছাড়াও উপজেলার কপালিয়া, কালিবাড়ি, নেহালপুর ও কোনাকোলা এলাকায় চলে ডোঙা তৈরির কাজ। কুমারঘাটা বাজারের ডোঙা তৈরির অধিকাংশ শ্রমিক খুলনার কয়রা এলাকা থেকে আসেন। জ্যৈষ্ঠ থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত তারা এখানে কাজ করেন। বাকি ছয় মাস কাজ করেন মংলা এলাকায়। আর স্থানীয় শ্রমিকরা এখানে কাজ করেন সারা বছর । শ্রমিকদের অধিকাংশ বংশ পরস্পরায় একাজে জড়িত। মনিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকাসহ সাতক্ষীরা, বেনাপোল, বটিয়াঘাটা, কেশবপুর, ডুমুরিয়া, অভয়নগর, নড়াইল এলাকায় যায় এসব ডোঙা। ক্রেতারা এসে ৬-১২ হাজার টাকায় কেনেন এগুলো। পেরেক এবং মেহগনি, পুইয়ে, লম্বু ও খই কাটে তৈরি হয় ডোঙা।
তিনজন শ্রমিক দিনে একটি করে ডোঙা তৈরি করেন। কাজ শেষে বৈদ্যুতিক মেশিনে ফিনিশিং দিয়ে রোদে শুকিয়ে কাল রং করা হয় ডোঙায়। কুমারঘাটা বাজারে শ্রমিক খাটিয়ে প্রথম ডোঙা তৈরির কাজ শুরু করেন স্থানীয় মেসার্স সবুজ এন্টারপ্রাইজ এর মালিক মো মোস্তাক আহমেদ মোল্লা।
এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, তিন জন শ্রমিক নিয়ে কাজ শুরু করি। এখন আমার ৬টা ঘরে ১৮ জন কাজ করে। বাজারে ছয়জন মালিকের ২২-২৩টা ঘরে কাজ চলে। তিনি বলেন, ডোবা এলাকা। ফসল তেমন হয়না। সারা বছর খাল বিলে পানি থাকে। সব সময় ডোঙা বিক্রি হয়। ঘের মালিকরা কেনেন বেশি। বর্ষার চারমাস লোকজনের জিরেন (বিশ্রাম) থাকে না। একটা ডোঙায় দেড়-দুই হাজার টাকা লাভ থাকে। আগে থাকতো কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বেশী ক্রয় করা।তবে এসব নৌকা মৎস ঘেরের মালিকা বেশী কেনেন।