মণিরামপুর প্রতিনিধি : চ্যাঙ, চিংড়ে, টেংরা, পুঁটি, জিয়েল, মাগুর, কৈ” এ সবই দেশী প্রজাতির মাছ। এ ছাড়াও খলসে, পাবদা, জেহা, মায়া, চান্দা, চেলা, বেলে, গুতে, বাইন, শৈল, টাকি, ফলই, গজাল, বোয়াল, বাতাসি টেংরা, স্বরপুঁটি, রয়না, চিতল, কাকলেস, এমনই নাম না জানা কত প্রজাতির দেশী মাছের সমারোহ এক সময় মণিরামপুরের খাল-বিল, পুকুর, ডোবা, হাওড়-বাওড় ও নদীতে পাওয়া যেত। কালের বিবর্তনে এ সবই এখন শুধুই অতীত। এখন বিল-খালের সেই প্রাকৃতিক জলাশয় আর নেই।
বিলের জমিতে মাছ চাষের জন্য নির্মিত হয়েছে মাছের ঘের-বেড়ী। এই মৎস্য ঘেরে মৎস্য চাষীরা চাষ করে আসছে বাগদা-গলদা চিংড়ির চাষ, পাবদা, রুই, কাতলা, মৃগেল, জাপানি, থাই পুঁটি, তেলাপিয়া, নাইলোটিকাসহ বিভিন্ন জাতের কার্প জাতীয় মাছ। যে কারণে এই মাছের ঘের-বেড়ীতে কোন ধরনের দেশী প্রজাতির মাছের চাষ হয় না।
গত কয়েক বছর বাজারে দেশী প্রজাতির মাছের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মৎস্য চাষীরা থাই জাতের কৈ, শিং, মাগুর,টেংরা,শৈল,টাকি ও বাইন মাছের চাষ করছে। এসব মাছের স্বাদ ও গুণাগুণ প্রাকৃতিক জলাশয়ে জন্মানো দেশী মাছের মত না হওয়ায় ক্রেতা-সাধারনের কাছে চাষের এসব মাছের চাহিদা অনেকটা কমে গেছে। যে কারণে মৎস্য চাষীরা বেশী লাভের আশায় নাইলোটিকা জাতের তেলাপিয়া ও পাবদা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
গত মঙ্গলবার মণিরামপুর পৌর শহরের মাছ বাজারে যেয়ে দেখা যায়, বাজারে কোন দেশী প্রজাতির মাছ নেই। খুঁচরা মাছ ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন জানান, বর্ষার এই ভরা মৌসুমে পাইকারী মাছের বাজারে কোন দেশী মাছের আমদানী নেই। কিছু চাষের দেশী মাছ মাঝে মাঝে বাজারে পাওয়া যায় যেটা নিয়মিত মেলেনা। দেশী জাতের মাছের যে অকাল চলছে তাতে অদুর ভবিষ্যতে কোন দেশী প্রজাতির মাছ বাজারে দেখা মিলবে না।
উপজেলার শ্যামক‚ড় ইউনিয়নের পাড়দিয়া রাজবংশী পাড়ার দুর্লভ বিশ্বাস জানান, তাদের বাড়ীর পাশে খাল রয়েছে। বর্ষার ভরা মৌসুমে তারা পাড়দিয়া ব্রীজের কাছে খালে ভেসাল পেতে কত না দেশী জাতের মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করেছে। এখন আর কোন দেশী প্রজাতির মাছ খাল-বিলে পাওয়া যায় না।
রাজগঞ্জ বাজারের মাছ ব্যবসায়ী কালিপদ বিশ্বাস জানান, মণিরামপুরের ঐতিহ্যবাহী ঝাপা বাওড়ে অতীতে নানা জাতের দেশী মাছ পাওয়া যেত। এখন বাওড়ে সেই সব দেশী মাছ তেমন নেই। বাওড়ের সেই স্বাভাবিক পরিবেশ এখন আর নেই, তাই দেশী জাতের মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ সাইদুর রহমান রেজা বলেন, অপরিকল্পিত ভাবে বিল-খালে মাছের ঘের নির্মাণ করায় প্রাকৃতিক জলাশয় না থাকায় মৎস্য অভয়ারন্য নেই। ফলে আস্তে আস্তে দেশী প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।