বিলাল হোসেন, শ্যামনগর ব্যুরো : বছরে ছয় মাস জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকে শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ভামিয়া গ্রাম। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে বৈশাখ মাস থেকে সৃষ্টি হয়ে আশ্বিন মাস পর্যন্ত জলাবদ্ধতা থাকে। এ গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে উত্তরে খোলপেটুয়া নদী, দক্ষিণে চুনা নদী।অপরিকল্পিত মৎস্য চাষ, সরকারি পানি নিষ্কাশনের খাল ইজারা দেয়া। পানি নিষ্কাশনের সুস্লুস গেট না থাকায়।
প্রতি বছর জলবদ্ধতার সম্মুখীন হয়ে থাকে ভামিয়া গ্রামের মানুষ। জলবদ্ধতা নিরসনের জন্য ভামিয়া খাল, টেকের খাল নামক সরকারি খাল রয়েছে। খাল দুটি সরকারি ভাবে ইজারা নিয়ে দখল করে রাখায়। বছরে অর্ধেক সময় জলবদ্ধতা ডুবে থাকে। জলবদ্ধতা থাকার ফলে পুকুর,ঘের,নালা ও খালের পানি দূষিত হয়ে বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি দেখা দিয়েছে। জলবদ্ধতার ফলে পানিবন্দী হয়ে থাকে ৮ হাজার মত মানুষ।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে ৫ টা, খেলার মাঠ রয়েছে ২টা, এখানে ১৭ বিজিবি ব্যাটেলিয়ান ক্যাম্প অবস্থিত। এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ মৎস্য চাষের উপর নির্ভরশীল। জলবদ্ধতার কারণে ১২ থেকে ১৩ হাজার বিঘা জমির ঘের পানির নিচে থাকে। শত শত বিঘার বীজ তলা নষ্ট হয়ে যায়। ২শতর অধিক পাকা এবং কাঁচা ঘরবাড়ি নষ্ট হয়। মানুষের চলাচলের জন্য ৬টি রাস্তা রয়েছে। রাস্তাগুলো পানিতে তলিয়ে থাকায় নাজুক অবস্থা।
ভামিয়া গ্রামের আদম আলী গাজী (৬৫) জানান, বৈশাখ মাস থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত পানিবন্দী হয়ে থাকতে হয়। ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট সব জায়গায় পানি থাকে। এতে করে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। কিবরিয়া (৩৫) জানান, ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি ২টা খাল পানি সরানোর জন্য করা হয়েছিল। কিন্তু খাল গুলো ইজারা নিয়ে দখল করার কারণে ৬ মাস পানিতে ডুবতে হয়। খুব কষ্ট করে বাড়ি থেকে বাইরে বেরোতে হয়।
২টা খেলার মাঠ বছরের ৮ থেকে ৯ মাস পানির নিচে থাকে ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা না করতে পেরে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। ভামিয়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম (৫৫) বলেন, ২০-২৫ বছর আগে দেখেছি বৃষ্টি আসলে সাথে সাথে পানি সরে যেত খাল দিয়ে। খাল গুলো দখল হয়ে যাওয়ার কারণে পানি সরানোর জায়গা নেই। খুকু বিবি (৫০) জানান, জলবদ্ধতা থাকার ফলে পুকুর, নালা ও খালের পানি দূষিত হয়ে। বিভিন্ন রকম রোগ চর্মরোগ, এলার্জি, চুলকানি ঘা, পাছাড়া, দেখা দিয়েছে। ভামিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম বলেন, অপরিকল্পিতভাবে মৎস্য চাষ, সরকারি খাল ইজারা দিয়ে দখল হয়ে যাওয়া।
পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত পরিমাণ গেট না থাকায় বছরে ৬ মাস জলবদ্ধতা থাকে। স্থানীয় সরকারের কাছে বারবার বললেও বিষয়টি সেভাবে গুরুত্ব সহকারে দেখে না।
বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম বলেন, জলবদ্ধতা নিরাশনে আমরা কয়েকটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। সরকারি সহযোগিতা পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে জলবদ্ধতা নিরাশনে কাজ শুরু করব।
শ্যামনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল রিফাত বলেন, ইজারা নেওয়া ব্যক্তি পানি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে জলবদ্ধতা তৈরি করলে। সরাজমিনে উপস্থিত হয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।