শহর প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কদমতলা বাজার কমিটির ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন আগামী ২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এদিন সকাল ৮ টা হতে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে কদমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট গ্রহন করা হবে। ত্রি-বার্ষিক এ নির্বাচনে মোট পদের সংখ্যা ১৫ টি হলেও ভোট হবে ৫ টি পদে।
বাকি ১০ পদের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ৫ টি পদ হলো-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহ সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রচার সম্পাদক। এতে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন-ছাতা প্রতিক নিয়ে আলহাজ্ব কামরুল ইসলাম, হরিণ প্রতিক নিয়ে মো. আইয়ুব আলী ও চেয়ার প্রতিক নিয়ে আলহাজ্ব ডা. হাসান সিদ্দীকি লাভু। সাধারণ সম্পাদক পদে মো. রফিকুল ইসলাম আনারস প্রতিক, শেখ শাহাজাহান আলী মোটর সাইকেল প্রতিক ও মিজানুর রহমান চশমা প্রতিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সহ সাধারণ সম্পাদক পদে আশরাফুজ্জামান টিউবওয়েল প্রতিক ও জাকির হোসেন মোরগ প্রতিকে লড়ছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দোয়েল পাখি প্রতিকে সিরাজুল ইসলাম ও সাইকেল প্রতিকে আনিছুর রহমান আনিছ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এছাড়া, প্রচার সম্পাদক পদে মিলন হোসেন দেয়াল ঘড়ি ও শাহারুল ইসলাম মাইক প্রতিকে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী না থাকায় সহ-সভাপতি পদে মো. শামসুজ্জামান, কোষাধাক্ষ পদে আব্দুল্লাহ আল মামুন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে এসএম আফসার উদ্দীন এবং সদস্য পদে- মোহাম্মাদ আলী, আবুল হাসান, শেখ. মিজানুর রহমান, শেখ নিজামুল হক শিমুল, হযরত আলী, রবিউল ইসলাম ও মো. সাইদুজ্জামান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিকে দীর্ঘ ১৫ বছর পর অনুষ্ঠিতব্য আনন্দ-উৎসবের এ নির্বাচনে বাজারের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার ঝোলানো নেই। মূলকথা পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে কদমতলা বাজারসহ এর আওতাধীন বিপণিবিতানের দেয়াল। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রার্থীরা ভোটারদের নিকটে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
নাম না জানানোর শর্তে বাজারের একজন প্রবীণ ব্যবসায়ী বলেন, গত ৫ই আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই পালিয়ে যায় প্রায় দুই যুগকাল যাবৎ কদমতলা বাজার জিম্মি করে রাখা জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি মান্নান। জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়েই নির্বাচনের আয়োজন করেছে কদমতলা বাজার কমিটি। বাজারের অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, মান্নান কদমতলা বাজারকে নষ্ট করে দিয়েছে। জেলা শহরের প্রবেশদ্বারে অবস্থিত এই বাজারে দীর্ঘ ১৪/১৫ বছর যাবৎ কোন নির্বাচন হতে দেয়নি আব্দুল মান্নান।
দলীয় মদদপুষ্ট মান্নান দোকানদার না হলেও স্বঘোষিত আহবায়ক হওয়ায় তার হুকুমই ছিল এই বাজার পরিচালনার অঘোষিত সংবিধান। তার হুকুম-নির্যাতনে বাজারের প্রত্যেক ব্যবসায়ী ছিল তার কাছে জিম্মি। আব্দুল মান্নান ফাও খায়নি এমন দোকান বাজারে খুব কমই আছে। এমনকি ঝাড়ুদাড়ের নিকট থেকেও সে চাঁদার টাকা নিত। টয়লেট পরিষ্কারের জন্য উঠানো টাকা থেকে তাকে ভাগ দিত হতো। আর বড় মাছ, মাংস, দামী সবজি তো তাকে ব্যাগ ভরে দিতেই হতো।
গুরুত্বপূর্ণ এ নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্বে আছেন এড. আকবর আলী। অপর নির্বাচন কমিশনার এড.রেজাউল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম ঢালী এবং এড. রফিকুল ইসলাম, এড. শফিক উদ্দীন, এড. হাসিব, এড. ফিরোজ। এছাড়া, নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে আছেন, এড. মো. আব্দুস সবুর, শেখ মাসুদ, আবুল খায়ের ও নুরুল ইসলাম।
সভাপতি প্রার্থী আইয়ুব আলী বলেন, কদমতলা বাজারকে একটি আধুনিক ও স্মার্ট বাজারে উন্নীত করতে ইতোমধ্যে আমি ব্যবসাীদের জন্য একটি অফিস ও গোসলের জন্য কাজ শুরু করেছি। ১২ বছর বয়স থেকে আমি এই বাজারে ব্যবসা করি। ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষায় আমি ‘আমার কথা ও নির্বাচনী ইশতেহার’ প্রকাশ করেছি।
আমি নির্বাচিত হলে একটি পরিচ্ছন্ন ও দুর্ণীতিমুক্ত বাজার উপর দেবো। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি নির্বাচিত হলে বাজারের উন্নয়নে যা কিছু দরকার তার জন্য চেষ্টা করবো।
নির্বাচন বিষয়ে এড. আকবর আলী বলেন, নির্বাচনে ৬১৬ জন ভোটার তাদের নিজেদের মত করে তাদের নেতা নির্বাচন করবেন। সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহন করেছি। মোট প্রার্থী ছিল ২২ জন। তবে অন্য প্রার্থী না থাকায় ১০ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। দীর্ঘদিন পর কদমতলা বাজার কমিটির ভোটকে কেন্দ্র করে প্রার্থী, ভোটার ও সাধারণ জনগণের মধ্যে অনন্দ-উৎসব বিরাজ করছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বাজারের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন পয়েন্টে ভোট নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর নানান তথ্য।