ইয়ছিন আরাফাত, বুধহাটা প্রতিনিধি : আশাশুনিতে বিএনপির ইউনিয়ন কমিটির সম্মেলন নিয়ে দু’ গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে। সম্মেলন স্থলে ১৪৪ ধারা জারী করা হয়েছে। সম্মেলন পন্ড হয়ে গেছে। পুলিশ ও সেনা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বুধহাটা ইউনিয়ন বিএনপির ত্রিবার্ষিক সম্মেলন আহবান করে বিএনপির একটি অংশ।
সকাল ১০ টায় ইউনিয়নের পদ্ম বেউলা সাইক্লোন শেল্টার মাঠে কমিটি নির্বাচনে ভোট গ্রহন শুরু করা হয়। ভোট চলাকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সম্মেলন স্থলে ১৪৪ ধারা জারী করে মাইকে ঘোষণার ব্যবস্থা করেন। বেলা ১২.৩০ টার দিকে অপর পক্ষের শতাধিক নেতা কর্মী সম্মেলন স্থলে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। হামলার হাত থেকে রক্ষা পেতে ছুটোছুটি, বিভিন্ন বাড়িতে, দোকানে, স্কুলে আশ্রয় নেয় অনেকে। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ।
ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, রড-লাঠি নিয়ে হামলায় উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক পলাশ, যুব দলের সাবেক সহ-সভাপতি বকুল, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শফি, কল্লোল, দিপু, আশিক, শফিকুল ও আছাফুর এবং অপর পক্ষের উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক রবিউল আওয়াল ছোট, যুবদল কৃষি বিষয়ক সম্পাদক রমজান, যুবদল কর্মী আজমিনুরসহ কমপক্ষে ৭ জন আহত হন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কৃষ্ণা রায়, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাশেদ হোসাইন অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে সকলকে ছত্রভঙ্গ করে দেন।
এসময় সম্মেলন স্থান থেকে সকলকে সরিয়ে দেওয়া হয়। আইন শৃংখলা বাহিনী এলাকা দখলে নেয়। এসময় বিএনপির সদস্য সচিব অন্যদের সাথে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলেন। তিনি বলেন, হামলাকারীদের প্রতিরোধ করার পর শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট গ্রহন চলছিল। আপনারা আইন শৃংখলা রক্ষায় থাকলে আমরা খুশি হতাম। কিন্তু আমাদের শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বন্ধ করে দিলেন কেন? ভোটারদের হাকিয়ে বের করে দিলেন কেন? প্রয়োজন হলে আমাকে গ্রেফতার করেন।
পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে। তবে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সম্মেলন আয়োজনকারীদের মধ্যে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মশিউল হুদা তুহিন, যুবদলের সদস্য সচিব আবু জাহিদ সোহাগ বলেন, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ১০ টা থেকে আমরা ভোট গ্রহন করছিলাম। প্রতিপক্ষ পরিকল্পিত ভাবে রড, লাঠি, ইটপাটকেল নিয়ে হামলা চালিয়ে সম্মেলন পন্ড করে দেয়। কর্মী ও জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুললে তারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়। এরপর আমরা পুনরায় শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট শুরু করি, অধিকাংশ ভোটার ভোট দিয়েছে।
কিন্তু প্রশাসন সারিবদ্ধ লাইনে দাড়িয়ে ভোট দিতে আসা ভোটারদের তাড়িয়ে দিয়ে সম্মেলন পন্ড করে দেয়। অপর দিকে উপজেলা বিএনপির আরেক অংশের আহবায়ক আসিফুর রহমান তুহিন, সদস্য সচিব জাকির হোসেন বাবু, যুগ্ম আহবায়ক খায়রুল আহসান বলেন, ১৬ জানুয়ারী খুলনা বিভাগীয় টিমের সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু তারা ১৬ তারিখের আগেই ত্যাগী নেতাদের বাদ রেখে গোপনে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী নিয়ে কমিটি গঠন করে। আজও একই ভাবে সম্মেলন শুরু করা হলে আমাদের নেতাকর্মীরা উপস্থিত হয়, তখন তাদের উপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। এব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্তদের ও উর্দ্ধতন নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সাথে সাথে হাবিবুর রহমান হবিকে দায়িত্ব থেকে অপসারন ও আগামীতে সম্মেলন আহবান করা হলে প্রতিহত করার ঘোষণা প্রদান করা হয়। বিকাল ৫ টায় আশাশুনিতে নির্বাচন কমিশন, অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ব্যালট বক্স খুলে ভোট গননা করেন। ব্যালট গণনা শেষে নির্বাচন কমিশন প্রধান শেখ আঃ রশিদ ফলাফল ঘোষণা করেন। অপর নির্বাচন কমিশনার আঃ আলিম ও রবিউল আওয়াল ছোটর উপস্থিতিতে তিনি জানান, সভাপতি পদে আলহাজ্ব আঃ রব ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মেম্বার আঃ রব বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। মোট ৪৯০ জন ভোটারের মধ্যে দুপুর সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত ১৮১ জন ভোটার ভোট প্রদান করেন।
যার মধ্যে ২টি ভোট বাতিল হয়। সাধারণ সম্পাদক পদে খোরশেদ আলম ও মামুন হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মামুন হোসেন ১৩৪ ভোট পেয়ে বেসরকারি ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী খোরশেদ আলম পেয়েছেন ৪৫ ভোট। উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মশিউল হুদা তুহিন জানান, সকাল ১০ টায় ভোট গ্রহন কার্যক্রম শুরু হয় এবং দুপুর সাড়ে ১২ টায় প্রশাসন ভোট গ্রহন বন্ধ করে দেয়। তখন বহু ভোটার সারিবদ্ধ দাড়িয়ে ছিলেন। ৪ টা পর্যন্ত ভোট চললে অধিকাংশ ভোটার ভোট দিতে পারতেন।
এসময় ইতিপূর্বে খাজরা ইউনিয়ন বিএনপির নির্বাচিত সভাপতি বোরহান উদ্দীন বুলু, সাধারণ সম্পাদক ইউনুছ আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আবু রায়হান, কাদাকাটি ইউনিয়নে সভাপতি পদে তুহিন উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক পদে জাহাঙ্গীর আলম টুকু, সাংগঠনিক সম্পদক পদে আছাফুর রহমান ডাবলু এবং আশাশুনি সদর ইউনিয়নে সভাপতি পদে আঃ আলীম, সাধারণ সম্পাদক পদে জাকির হোসেন প্রিন্স ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে গোলাম মোস্তফা নির্বাচিত হয়েছেন বলে ঘোষণা করা হয়।