শেখ আমিনুর হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার : অনুমোদন ছাড়াই বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা ব্যতীত, যথাযথ প্রাকল্লন ও স্পেসিফিকেশান প্রস্তুত ছাড়াই দরপত্র আহবান, বাজার দর যাঁচাই কমিটি ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটিকে প্রভাবিত করে ও দাখিলকৃত দরদাতার সাথে যোগসাজসে সাতক্ষীরা ইনস্টিটিউট ও হেলথ টেকনোলজিতে নিন্মমানের ও কম মূল্যের ৩১ প্রকার আসবাবপত্র সরবরাহ করে বেশি দামে কেনা দেখিয়ে ৮৮ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে দুদকের দায়েরকৃত মামলায় সাতক্ষীরার সাবেক সিভিল সার্জন ডাঃ তওহীদুর রহমান ও ঢাকা উত্তরার বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোঃ শাহীনুর রহমান ও ঢাকা শেরে বাংলা নগরের গণপূর্ত ই/এম কাঠের কারখানা বিভাগ এর উপসহকারি প্রকৌশলী মোঃ মাহফুজ আনাম এর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (০৪ ফেব্রুয়ারি ‘২৫) সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ মোঃ নজরুল ইসলাম অভিযোগপত্র পর্যালোচনা শেষে এ আদেশ দেন। আসামী ডাঃ তৌহিদুর রহমান আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর গ্রামের ও বর্তমানে ঢাকার উত্তরার মৃত তফছির উদ্দিনের ছেলে। আসামী মোঃ শাহিনুর রহমান ঢাকা উত্তরার ও মাগুরা জেলা সদরের কাদিরাবাদ গ্রামের একেএম ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে। আসামী মাহফুজ আনাম ঢাকার পল্লী থানার মীরপুর ১৪ নং রোডের ডি ব্লকের ও স্থায়ী ঠিকানা ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা থানার পুরাতন বাখরবা গ্রামের আব্দুল করিম মোল্লার ছেলে।
দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপসহকারি পরিচালক মোঃ ফেরদৌস রহমানের ২০২০ সালের ৩ জুন দায়েরকৃত ১২ নং মামলার বিবরনে জানা যায়, অনুমোদন ছাড়াই বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা ব্যতীত, যথাযথ প্রাকল্লন ও স্পেসিফিকেশান প্রস্তুত ছাড়াই দরপত্র আহবান, বাজার দর যাঁচাই কমিটি ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটিকে প্রভাবিত করে ও দাখিলকৃত দরদাতার সাথে যোগসাজসে সাতক্ষীরা ইনস্টিটিউট ও হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) ও মেডিকেল এসিসট্যান্ট ট্রেণিং স্কুল (ম্যাটস) সাতক্ষীরা কর্তৃক অনঅনুমোদিত, বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা ব্যতীত ওই দটি প্রতিষ্ঠানের বইপত্র ও সাময়িকি, খেলার সামগ্রী, ব্যবজার্য দ্রব্যাদি যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম, কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ, আসবাবপত্র, টেলিফোন সরঞ্জাম ও অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম কেনার উদ্যোগ নেন।
এ ৬১ প্রকার আসবাবপত্র কেনার জন্য ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর আইএইচটি তে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে বইপত্র ও সাময়িকী খাতে দুই কোটি, খেলার সামগ্রী খাতে ৫০ লাখ, ব্যবহার্য সামগ্রী খাতে ২০ লাখ, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম খাতে ১০ কোটি, কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ খাতে এক কোটি, আসবাবপত্র খাতে তিন কোটি, টেলিফোন সরঞ্জাম খাতে ৫০ লাখ, ও অগ্নি নির্বাপক সরঞ্জাম খাতে এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ও জনশক্তি উন্নয়ন শাখার পরিচালক বরাবর চিঠি পাঠান তৎকালিন সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ও সাতক্ষীরা ইনস্টিটিউট ও হেলথ টেকনোলজির সাবেক অধ্যক্ষ ডাঃ তওহিদুর রহমান। সংশ্লিষ্ট সচীব ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি স্বাস্থ্য জনসংখ্যা ও পুষ্টি, সেক্টর কর্মসূচির আওতায় চিকিৎসা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়নের বরাদ্দ হতে আইএইচটি, সাতক্ষীরার ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বরাদ্দ থেকে তৃতীয় কিস্তী বাবদ জিওবি খাতে যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম কেনা বাবদ ৭৫ লাখ ও আসবাবপত্র কেনা বাবদ ৭৫ লাখ টাকা শর্ত সাপেক্ষে জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বরাবর মঞ্জুরী জ্ঞাপন করেন।
চাহিদা বরাদ্দ পাওয়ার আগেই ডাঃ তওহিদুর রহমান আইএইচটি এর ইকুইপমেন্ট এণ্ড আদারস এবং আসবাবপত্র কেনার জন্য তিনটি লটে ভাগ করে ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেন। ডাঃ তওহিদুর রহমান আইএইচটি’র যথাযথ প্রাক্কলন ও স্পেসিফিকেশন প্রস্তুত ছাড়াই দরপত্র আহবান করেন। ডাঃ তওহিদুর রহমান সাতক্ষীরা আইএইচটি’র ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের আসবাবপত্র, বইপত্র সাময়িকী, যন্ত্রপাতি ও খেলাধুলা সামগ্রী কেনার জন্য ওই বছরের ৪ মার্চ ৬১টি আসামবাবপত্র সামগ্রীর বাজার দর উলে্ৈলখ করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ১৫ মার্চ দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি গঠণ করা হয়।
২২ মার্চ সাতক্ষীরা শহরের বাকালের মেসার্স শেখ মোকারেম হোসেন ও ঢাকার উত্তরার বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজ দরপত্র দাখিল করে। ১৫ মার্চ ডাঃ তওহিদুর রহমান দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠণ করে নিজেই সভাপতি হন। ৪ এপ্রিল বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজ সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মনোনীত হন। ডাঃ তওহিদুর রহমান তারিখ বিহিন চুক্তিপত্র তৈরি করেন। ৭ এপ্রিল ওই ঠিকাদারকে আইএইচটির ৩০ প্রকার জিনিস ও ১৫ মে ৩১ প্রকার জিনিস সরবরাহের জন্য কার্যাদেশ দেন। বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাহিনুর রহমান মালামালের মূল্য বাবদ দুটি চেকে এক কোটি ৭৪ লাখ ৯৯হাজার ৯১০ টাকা সিভিল সার্জন বরাবর জমা দিলে ভ্যাট ও ট্যাক্স বাদে তাকে এক কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ২২৩ টাকা পরিশোধ করা হয়।
২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দুদক টিমের কাছে আসবাবপত্র নিম্মমানের ও অধিক মূল্য ধরা হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। সরবরাহকৃত আসবাবপত্রের মূল্য ৮৬ লাখ ৪৫ হাজার ৭০০ টাকা হলেও বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজ এক কোটি ৭৪ লাখ ৯৯হাজার ৯১০ টাকা দাম দেখিয়েছেন বলে প্রতীয়মান হয়। মামলায় ৫জনকে আসামী করা হলেও তদন্তে সাতক্ষীরার বাকালের মেসার্স মোকাররম হোসেনের স্বত্বাধিকারী শেখ মোকাররাম হোসেন ও গণপুর্ত বিভাগের সাতক্ষীরা শাখার উপসহকারি প্রকৌশলী বদরুল হাসানের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
ফলে পরিবর্তিত তদন্তদকারি কর্মকর্তা দুদকের ঢাকা প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক রতন কুমার দাশ গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর আদালতে ডাঃ তওহিদুর রহমান, শাহীনুর রহমান ও মাহফুজ আলমের নাম উল্লেখ করে ৮৮ লাখ ৫৪ হাজার ২১০ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করার অভিযোগে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/২১৮/১০৯ ধারা ও দূর্ণীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় ৮নং অভিযোগপত্র দাখিল করেন। যাহা গত ২৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার আদালতে উপস্থাপন করা হলে বিচারক মোঃ নজরুল ইসলাম তিন আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। বৃহষ্পতিবার ৬ ফেব্রুয়ারি আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আগামি ১৬ মার্চ পরবর্তী দিনস ধার্য করা হয়েছে। সাতক্ষীরা জজ কোর্টের দুদকের পিপি অ্যাড. আসাদুজ্জামান দিলু ওই তিন আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।