আতাউর রহমান রানা, শহর প্রতিনিধি : আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হারিকেন এখন শুধুই স্মৃতি। এলইডি লাইট এসে হারিকেন বা ল্যাম্প প্রায় হারিয়ে গেছে আমাদের মাঝ থেকে। যারা টেবিলের মাঝখানে হারিকেন রেখে চার পাশে বসে হারিকেনের মিট মিট আলো তে পড়া লেখা করে ছেন তারা আজ অনেক বড় বড় কর্মকর্তা উচ্চপদস্থ সরকারি বেসরকারি লোক।
পথিকের পথের সাথী হারিকেন আজ শতভাগ বিদ্যুতায়নের যুগে কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে। গ্রামের মানুষের নিত্যা সঙ্গী ছিলো যে হারিকেন।যা দিয়ে গ্রাম বাংলার রাতের আঁধার দূরীভৃত হতো তা আজ টর্চ লাইট বা গ্যাস লইট দিয়ে খুজে পাওয়া মুশকিল।এই কেরোসিন তেলের হারিকেন জ্বালিয়ে রাতে কৃষকরা হালচাষ করতে দেখা গেছে। রাতে মাছ শিকার করেছে। তা আর দেখা যায় না গ্রামে।
হারিকেন দেখতে কেমন এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য পরবর্তী প্রজন্ম ছেলে মেয়ে রা জাদুঘরে যেতে হবে। হারিকেন গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রতীকগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। বিদ্যুৎবিহীন গ্রামের আলোর চাহিদা মিটানো বা অন্ধকার দূর করতে এক সময় গ্রামের মানুষের অন্যতম ভরসা ছিলো হারিকেন। যার জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার হতো কেরোসিন। যার অন্যতম জ্বালানি উপাদান ছিলো কেরোসিন। তখনকার সময় এসব জ্বালানি গ্রামঅঞ্চলে রাতে বিয়ে, যাত্রাপাল, জারিগান সারিগান, মিলাদ মাহফিল ইত্যাদি অনুষ্ঠান করা হতো।
হারিকেন জ্বালিয়ে বাড়ীর ওঠানে বা ঘরের বারান্দায় ছাত্র, ছাত্রীরা বসে এক সাথে পড়াশুনা করতো। আবার রাতে খাবার ও খেতো। আজ আধুনিকতার ছোয়ায় বদলে গেছে সেসব। সেই হারিয়ে যাওয়ার ধারাবাহিকতায় হারিয়ে গেছে এক সময়ের রাতের সঙ্গী হারিকেন। কয়েক দশকের বেড়ে ওঠা মানুষের স্মর্তির সাথে জড়িয়ে আছে হারিকেন শব্দ টা কিংবা জ্বলার দৃশ্যটা। জ্বালানোর আগে ঘরের গৃহিনীরা ওটাকে পরিস্কার করে যেনে আলো আরো ভালো পরিস্কার দেখা যায়। আজকের প্রজম্নেরা অনেকেই চিনতে পারবে না।
এই প্রযুক্তিটি। হারিকেন কেবল ঘরকে আলোকিত করবার জন্যই রাখা হতো না অন্ধকারে বাড়ীর বাইরে কোথাও গেলে এই হারিকেন ব্যবহার করা হতো। তখন রাতের সাথী ছিলো হারিকেন। আলোও হতো বেশ। যদি ও এখনকার সাদা আলোর মতো নয়। তখন এই ছিলো বেশ ভালো আলো।সাতক্ষীরা জেলার কোথাও আগের মত এখন আর হারিকেনের ব্যবহার দেখা যায় না। দোকান গুলোতে পাওয়া যায় না হারিকেন।
রিস্কা-ভ্যান গাড়ীতেও মিলে না হারিকেন। গ্রামের বৃদ্ধ দুজনের সাথে কথা হয় বয়স ৭৫/৭৬ ছুই ছুই আমাদের সময় ঐ লম্প, হারিকেন এর ব্যবহার খুব বেশীই ছিলো। সব কাজে লাগতো এই হারিকেন। আমাগের সময় কারেন্টের কোন দেখা মিলতো না। তখন আমরা টেলিভিশন দেখতে অনেক দুরে যেতে হতো তাও আবার চার্জ এর ব্যাটারি তে । তারা আরো স্মতিচারন করেন, খুব মনে পড়ে সে সব দিনের কথা যখন ছোট ছিলাম ইলেকট্রনিক যত্রাংশ ছিলো না ঘরে।
আমরা পড়তে সন্ধ্যায় বসতাম পাটি নেছে মাঝে রেখে দিতাম তার আলোতে পড়াশুনা করতাম। আলো কম যদি থাকতো তাহলে। বকাবকি করলে মা রান্না ঘর থেকে কুপি বাতি এনে দিতো। আর একটু ঝড়, বৃষ্টি হলে হারিকেন আর কুপির আলো নিভু নিভু করতো। তখন পড়া থেকে বেঁচে যেতাম। রাতে ঘুমাবার সময় হারিকেন নিভু নিভু করে রাখতেন। যদি কোন কিছু আসে তার জন্য। সে সময় খুব মজা হতো যখন পড়া আর হতো না। সে সময় আমরা বাবা, মা, দাদা, দাদী, ভাই, বোন সবাই এক সাথে খেতাম হারিকেনের আলোতে।
তখনকার কথা মনে পড়লে শুধু ই ভালো লাগে কি ভাবে দিন কাটিয়েছি। খুব সুন্দর সময় ছিলো সে সময়। মো রফিক, সহ আরো অনেকেই বলেন ২০০৩/২০০৪ সালের কথা তখনও হারিকেনের আলোয় পড়াশুনা করেছি। বিদ্যুৎ ছিলো কিন্তু যখন লোডশেডিং হতো তখন হারিকেন, কেই বা ল্যাম্প, বা মোমবাতির আলোতে পড়েছি। এস এস সি পরীক্ষা দিতে হবে তার জন্য স্কুলে থেকে পড়তে হবে সেখানেও হারিকেনের আলোতে পড়েছি। কিন্তু সেই হারিকেন, ল্যাম্প বাতী এখন আর সে ভাবে চোখে মেলে না।
বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, আমি বিগত দিনে হারিকেন, ল্যাম্প বিক্রয় করেছি কিন্তু এখন আর বিক্রয় নেই বলতে গেলে চলে। হারিকেনের দামছিলো ১০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পযন্ত বিক্রয় করেছি আর ল্যাম্প ১০/২০ টাকা বিক্রয় করেছি। তখন হারিকেনের, ল্যাম্প এর রমরমা ব্যবসা ছিলো। এখন মাসের পর মাস একটা ও কোন হারিকেন কিংবা ল্যাম্প বিক্রয় হয় না।
হারিকেন কে জ্বালাতে গেলে তাতা কাজ থাকতো হারিকেনের কাচ সেট করা, তার ফিতা সেট করা তার জ্বালানি হিসাবে কেরোসিন তেল দেওয়া তার পরে জ্বলবে। আমাদের হারিকেনের মাঝে সভার মিশে আছে কতই না শৈশবের স্মর্তি। যখন খুব ছোট ছিলাম মানে হাতে গোনা কয়েকজনের বাড়ীতে বিদ্যুৎ ছিলো। তখন ও আমরা কষ্টকরে হারিকেনের আলোতে পড়াশুনা করছি। তখন একমাত্র অবলম্বন ছিলো হারিকেন। আর হারিকেন দেখলে মনে পড়ে শৈশবের কথা।
তখন গ্রামের বাড়ীতে চারদিকে অন্ধকাছন্ন ঝি ঝি পোকার দাক তার মধ্য নিভু নিভু আলো। জোনাকি পোকার মত মিট মিট করে জ্বোলতে এ হারিকেন। দুর থেকে ভালোই লাগতো। কত ব্যবসা প্রতিষ্ঠা নে হারিকেন টাঙ্গিয়ে দোকান দারি করেছে।
বাজারের দোকান দার শংকর রায় জানান, আমি র্দীগ দিন যাবৎ বাবসা করছি সে ২০০০ সালের কথা তখন আমি আমার দোকানে হারিকেন, ল্যাম্প বিক্রয় করতাম বিক্রয় ও বেশ ভালো ছিলো। কিন্তু আজ ২১/২২ বছর পর এসে দেখি হারিকেন, ল্যাম্প ল কোন বেচা কেনা নেই। জানান হারিকেনের আলোতে আমিও পড়াশুনা করেছি। এখন তা আর দেখা যায় না। সময়ের কি ব্যবধান। এই হারিকেন বা ল্যাম্প কাচা বাজার মানে তরি তরকারীর বাজারে বেশী দেখা মিলতো। কিন্তু এখন সে সব জায়গায় গ্রামের এখনও পযন্ত কোন কোন বাড়ীতে খুজলে কোন এক প্রকারে পাওয়া যায়। কালের বির্বতনে প্রায় হারাতে বসেছে হারিকেন, ল্যাম্প, হ্যাচাক, কুপিবাতি।