বিলাল হোসেন, শ্যামনগর ব্যুরো : তথ্য অনুসন্ধানে উঠে আসে অনলাইন জুয়ার সাব এজেন্টের কাহিনী। কথা হয় মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগর গ্রামের মাসুম হোসেনের সাথে, আশাশুনি শ্বশুর বাড়ির সমন্দিদের খেলা দেখে অনলাইন জুয়ায় আসক্তি হয়ে পড়ে। প্রথমে আশাশুনির এজেন্ট রাকিবের মাধ্যমে ১ হাজার টাকা দিয়ে আইডি খুলে খেলা শুরু করে। এরপর নওয়াবেঁকী মাসুমের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করতো। ছোট একটা ব্যবসা ছিল অনলাইন জুয়া খেলে সব শেষ করে দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত স্বর্ণের চেন নাকের দুল বিক্রয় করে খেলা করে।
পরবর্তীতে মাসুমের সাবেজেন্ট হিসেবে কাজ করতো। প্রতিমাসে প্রশাসনের টাকা দিয়ে ব্যবসা চালাতে হতো বলে জানান। অনুসন্ধানের একের পর এক তথ্য চলে আসে প্রতিবেদকের হাতে কথা হয়। জেলেখালি গ্রামের সঞ্জয় মিস্ত্রীর সাথে, প্রথমে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে ৬ মাসে সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা খোয়াই। এরপর থেকে পারিবারিক অশান্তি শুরু হয়। পরবর্তীতে খাওয়ানো টাকা তুলতে নওয়াবেঁকী বাড়ি বন্ধু মাসুমের মাধ্যমে এজেন্টর কাজ শুরু করে।
এজেন্টের কাজ করার সময় ডিবি পুলিশ উঠিয়ে নেয় সেখান ছাড়িয়ে আসার পরে এজেন্ট এর কাজ বাদ দিয়ে দেয়। মুন্সিগঞ্জ আইট পাড়া গ্রামের আসাদুল মল্লিক জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার এ্যাড আসে। একাউন্ট খুলে খেলা শুরু করি এরপর লস হতে থাকে। চিন্তা করলাম সাব এজেন্ট নেওয়ার নওয়াবেঁকী তানভীরের কাছ থেকে সাব এজেন্ট নেয়। মাসে যে টাকা কমিশন আসে সেই কমিশন থেকে আমার কিছু টাকা দেয়। আর বাকি টাকা তানভীর নিয়ে নেয়। আমার কাছে অনেক প্রশাসন আসতো তাদেরকে খরচের টাকা দিলে চলে যেত। সাব এজেন্টও লস হচ্ছে। এখানে লাভ হল মূল এজেন্টের।
এ বিষয় নিয়ে কয়েক দফা প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসেছে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে মূল হোতাদের নাম। এ সকল হোতাদের সহযোগিতা করতে বাদ জায়নি প্রশাসন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও। পদ্মাপুকুর গ্রামের সিরাজের চায়ের দোকানে গিলে দেখাযায় এজেন্টদের ফোনে ডিপোজিট ও ইউড্র দেওয়ার কর্মব্যাস্ততার এ যেন অনলাইন জুয়ার আধুনিক আসর। তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে বলেন প্রশাসনের সাথে চুক্তি আছে !
সাংবাদিকরা রির্পোট করলে অভিযান দিতে আসার আগে আমাদের মাস্টার এজেন্টদের বলে আসে। আমাদের একটি ম্যাসেন্জার গ্রুপ আছে তাতে জানিয়ে দিলে আমরা সবধান হয়ে যাই। শ্যামনগর উপজেলায় প্রতিটা ইউনিয়নে সাব এজেন্ট ও খেলোয়াড়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, পদ্মপুকুর ইউনিয়ন ও আটুলিয়া ইউনিয়ন থেকে এই খেলার উৎপত্তি। মূল এজেন্টের অধিকাংশই এই দুই ইউনিয়নের।
এ অঞ্চলের ইট ভাটায় কাজ করা ও চিংড়ি চাষের সাথে যুক্ত থাকা মানুষ বেশিরভাগ এ খেলার আসক্ত হয়েছে এর ফলে এলাকার অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছে জুয়ায় আসক্তি পরিবারগুলো মধ্যে প্রতিনিয়ত কলহ বাড়ছে। আবার উঠতি বয়সী ছাত্ররা বাড়ির থেকে মা বোনের স্বর্ণের গহনা চুরি করে স্বর্নকারের দোকানে বিক্রি করতে আসার মতো ঘটনা রয়েছে বেশ। শ্যামনগরের জুড়ে অনলাইন জুয়া, উপকূলীয় এ জনপদের রন্দে রন্দে ছড়িয়ে পড়েছে এতে আসক্ত হয়ে নিস্বঃ হচ্ছে খেলোয়াড়রা, অরপ দিকে অল্প দিনে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছে এজেন্টরা।
তথ্য অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, গত ৫ আগস্টের আগে এ জুয়ার এজেন্টরা প্রশাসন ও শ্যামনগর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ন আহব্বায়ক হাফিজুর রহমান হাফিজ সহ কয়েকজন আওয়ামীলীগার তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। জনপ্রতি মুল এজেন্ডদের কাছ থেকে ৩ হাজার করে টাকা নেওয়া হত। সরকার পরিবর্তনের পরে গেল পাঁচমাসে সেই চুক্তির নিয়ন্ত্রণ হারায়। সম্প্রতি শ্যামনগর উপজেলার একটি রাজনৈতিক গ্রুপ অনলাইন জুয়ার মূল এজেন্টদের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
প্রশাসন তাদের অস্তিত্ব জানান দিতে কয়েকটি অভিযান চালাতে দেখা যায়। এ সকল মূল এজেন্টদের প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না সাব এজেন্টেরা। কয়েকজন সাব এজেন্টদের সাথে কথা বলে জানাযায়, খেলোয়ারদের পাশাপাশি বিপকে আছি মুভাক্যাশ নামের একটি এ্যাপসের ম্যাধ্যমে টাকা ডিপোজিট ও ইউড্র করা হয়। মাস শেষে মূল এজেন্টের ম্যাধমে সাব এজেন্টরা হাজারে ৬০ টাকা হারে কমিশন পায়। কিন্ত যে টাকা তাদের প্রাপ্প তার থেকে মাইনাস দেখিয়ে মূল এজেন্ট সেই টাকা উঠিয়ে নেয়।
মুন্সীগঞ্জ জেলেখালী গ্রামের দেবদাস বলেন, আমি ৫ লক্ষ টাকার মতো অনলাইন জুয়া খেলে হেরে গেছি। বৃহস্পতিবার সারাদিনে ৪৫ হাজার টাকা খোওয়ানোর পরে স্থানীয় এক চায়ের দোকানদার এর কাছে আমার বড় ভাইয়ের মোটর সাইকেল বন্ধক রেখে এজেন্ট সাধন ও আলমগীরের টাকা শোধ করে দেয়। কয়েকজন খেলোয়ারের সাথে কথা বলি তারা নাম প্রকাশ না করার সত্যে জানায় এ খেলায় একবার আসক্ত হলে আপনার দুনিয়ার কিছু ভালো লাগবে না। মাথায় শুধু লাভ লোকসানের হিসাব ঘুরবে। এ করে আমার দোকান ব্যাবসা শেষ করছি।
পদ্মাপুকুরে এখন প্রর্যন্ত পাঁচ জন বড় মাস্টার এজেন্ট নাম এসেছে এরাই মূলত, বাকি প্রায় তিন হাজার সাপ এজেন্ট তাদের ডাল পালা, রাঘবোয়াল এ পাঁচ জন হলেন পাকিমারা গ্রামের কামাল, প্মাপুকুর গ্রামের হাবিবুর রহমান, মোজাহিদুল ইসলাম ,খুটিখাটা গ্রামের রাহাত হোসেন, একই গ্রামের শাহিনুর রহমান। অনুসন্ধানে আটুলিয়া ইউনিয়নে এখানে এ প্রর্যন্ত মাস্টার এজেন্ট নাম উঠে এসেছে তারা হলেন কাছারীব্রিজ এলাকার মেহেদী রাজ, নওয়াবেঁকী এলাকার শেখ মিলন, নওয়াবেঁকীর তানভীর হোসেন, লোডের দোকানদার মাসুম হোসেন, চরের বিল গ্রামের সৌরভ মন্ডল, মোবাইল সার্ভিসাস সাধন মন্ডল, নাদিম হোসেন, ছোট কুপট সাপেরদুনের তারিকুল ইসলাম, বিড়ালাক্ষীর আবু বাক্কার, আবাদ চন্ডিপুর ওয়াহাব মোল্লার মোড়ের তৌফিক হোসেন, আটুলিয়া ক্লাব মোড়ের গফুর মাস্টারের ছেলে সাগর, নুরুদ্দিনের ছেলে সোহাগ, বাহাউদ্দিন, রানা দোকানদার নুর ইসলামের ছেলে মোহন, মুন্সিগঞ্জ হরিনগর গ্রামের আলমগীর হোসেন। এদের সাব এজেন্টের সংখ্যা ও প্রায় ২ হাজার।
এসব মূল এজেন্টদের মাসিক আয় দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকার ও বেশী বলে জানান আরো একটি নির্ভরশীল সূত্র। এসব মাস্টার এজেন্টদের সাথে বলতে তাদের মুঠোফনে যোগাযোগ করে না পেয়ে তাদের বাড়িতে গিয়ে মূখোমুখি হতে চায়লেও বাড়ি লোক সাপ জানিয়ে দেয় কথা বলা যাবেনা। সম্প্রতি এদের মধ্যে প্রশাসন কয়েকজনকে আটক করলেও জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, অনলাইন জুয়ার মূল্য এজেন্টদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনি খাতুন বলেন, আমরা আইন শৃঙ্খলা মিটিং গুরুপ্ত সহকারে আলোচনা করি এবং এ বিষয় নিয়ে প্রশাসন যতেষ্ট তৎপতা রয়েছে ইতো মধ্যে দুইজন গ্রেপ্তার হয়ছে। এ কাজের সাথে যুক্ত থেকে কেউ পার পাবে না। সকল কে আইনের আওতায় আনা হবে।