শেখ নুরুজ্জামান, কালিগঞ্জ (সদর) প্রতিনিধি : বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে হতদরিদ্র মানুষ যাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে ব্যবহার করতে পারে এ জন্য তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল পানির ট্যাংক। আর এই পানির ট্যাংক দেওয়ার নাম করে এলাকার শত, শত মানুষের নিকট হতে প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার নরিম আলী মুন্সি এবং তার পুত্র ফিরোজ আহমেদের বিরুদ্ধে লক্ষ, লক্ষ টাকা চাঁদাবাজি করে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
প্রতি জনের নিকট হতে ৫ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিলেও গত দেড় বছরেও তাদের ভাগ্যে জোটেনি কোন পানির ট্যাংক। ট্যাংক না পেয়ে ভুক্তভোগীরা তালিকায় নাম আছে কিনা জানার জন্য প্রতিদিন উপজেলা জনসাস্থ্য প্রকৌশলী অফিসে এসে ভিড় জমাতে দেখা গেছে। ঘটনাটি সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার মানুষের জন্য এ সব পানির ট্যাংক স্থাপন নিয়ে বুধবার (১৯ মার্চ ) দুপুরে উঠেছে নানান অভিযোগ।
অভিযোগ আছে বিগত আওমী লীগ সরকারের আমলের তৎকালীন এম,পি উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান, রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তারা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য নিজেরাই জড়িয়েছে ঠিকাদারদের সঙ্গে। সুবিধাভোগী পরিবারকে ট্যাংকের বিনিময়ে প্রতি পরিবার থেকে ৫ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে কিছু ইট ,বালু ,সিমেন্ট হাতে ধরিয়ে দিয়ে মিস্ত্রি দিয়ে বসিয়ে নিতে বলা হয়েছে এ সব ট্যাঙ্ক। যা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে অপ্রতুল্য।
এছাড়াও পরিবহন খরচ বাবদ প্রতি ট্যাংক পরিবারের নিকট থেকে অতিরিক্ত আরো ৫০০ টাকা করে ভ্যান ভাড়া বাবদ দিতে হয়েছে। বুধবার দুপুর ১২ টার দিকে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের সামনে এ প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয় ভুক্তভোগী কালীগঞ্জ উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়নের নিজদেবপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম, রেজাউল ইসলাম, হাফিজুর রহমান, রায়পুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম সহ একাধিক ভুক্তভোগীরা জানান দেড় বছর আগে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কালীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার নরিম আলী মুন্সী এবং তার পুত্র ফিরোজ আহমেদ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া পানির ট্যাংকের নামে আমাদের প্রত্যেকের নিকট থেকে ৫০০০ টাকা করে নিয়েছে ।
কিন্তু গত দেড় বছরেও আমরা সেই পানির ট্যাংকের কোন খোঁজ না পেয়ে এই অফিসে এসেছি। কিন্তু এখানে এসে কোন তালিকায় আমাদের নাম নাই। এ বিষয়ে জানতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং তার পুত্রের নিকট ফোন দিলেও ফোন ধরে না। এখন আমরা টাকাও ফেরত পাচ্ছি না পানির ট্যাংকিও পাচ্ছিনা ।
অফিস বলছে আমরা এ বিষয়ে কিছু জানিনা এবং কিছু বলতেও পারবোনা। তবে এ বিষয়ের তাৎক্ষণিক ঘটনার সত্যতা জানার জন্য প্রথমে কালিগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির পুত্র ফিরোজ আহমেদের নিকট ফোন দিলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে এবং টাকা নেওয়ার কোন প্রমাণ আছে কিনা উল্টো সাংবাদিককে ধমক দিয়ে জিজ্ঞাসা করে।
এ বিষয়ে আরো জানার জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার নরিম আলী মুন্সির নিকট ফোন দিলে তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, ৫ আগস্টের পরে তার বাড়িঘর ভেঙে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটি গোষ্ঠী রাজনৈতিক ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাদেরকে চক্রান্তে ফাঁসানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সাংবাদিকদের বিশেষভাবে অনুরোধ জানান। সমুদ্র উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার পানি সমস্যা কবলিত কালীগঞ্জ উপজেলা।
উপজেলাটি সমুদ্র এবং সুন্দরবনের কাছে হওয়ায় লবণতা এলাকায় বড় সমস্যা। এছাড়া এ উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপন করতে না পারায় এখানে সুপেয় পানির একটি বড় উৎস বৃষ্টির পানি। তাই নিরাপদ সুপেয় পানি সরবরাহ প্রয়োজনের আওতায় কয়েক দফায় ৫০০ অধিক রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং ট্যাঙ্ক বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এজন্য প্রতিটি ট্যাঙ্ক স্থাপনের জন্য ৪২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় এর মধ্যে ১ টি ট্যাংকের দাম ধরা হয় ২২ হাজার টাকা বাকি টাকা স্থাপনের মজুরি, ভ্যাট, ট্যাক্স খরচ এর সিংহভাগ টাকা লুটপাট করার জন্য তৎকালীন ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের নিজস্ব মন্ত্রী, এম,পির ঘনিষ্ঠ দালাল ঠিকাদারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। এদের মধ্যে বরগুনার কামাল এন্টারপ্রাইজ, ঢাকার মনির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং এ, বি এম ওয়াটার সাপ্লার্স, কুমিল্লা চাঁদপুরের শামীম ট্রেডার্স নামক এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো এ কার্যক্রম এখনও চলমান রেখেছে যে কারণে তৎকালীন সরকারি দলীয় এম,পি উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, দলীয় নেতৃবৃন্দ সরকারি ভাবে ১৫০০ টাকা জমা দেওয়ার নাম করে প্রতিটি পানির ট্যাংকি পরিবারের নিকট থেকে ৫ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেওয়া ছাড়াও কোথাও কোথাও এর থেকে বেশি টাকা নেওয়ার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
তবে এ বিষয়ে কালিগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী জুয়েল রানা সাংবাদিকদের জানান এ প্রকল্পে সরকারিভাবে দেখ ভালো ছাড়া আর কোন কিছু করার সুযোগ নাই আমাদের । বিষয়টি ওই সমস্ত ঠিকাদাররা ভালো বলতে পারবে।