কালিগঞ্জ প্রতিনিধি : কালিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মৎস্য চাষের চিংড়ি গুলোতে বাগদা চিংড়িতে ভাইরাস নামক মড়ক দেখা দিয়েছে। কোন কিছু বুঝে উঠার আগে ঘেরে বাগদা চিংড়ী মারা যাচ্ছে। তিন দিকের ব্যবসায়ীরা বা চাষীরা প্রতিকার পাওয়ার কোন সময় পাচ্ছেনা আবার কোন ঔষধে কাজ হচ্ছেনা। মাছ মরে পঁচে যাচ্ছে।
পানি দুর্গন্ধ হচ্ছে। চিংড়ি মাছ মরে ঘের ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। কালিগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের অধিকাংশ বিলে বাগদা ঘেরে এরকম দুরাবস্থা। মৌসুমের শুরুতে চিংড়ী মাছে মড়কের ফলে কালিগঞ্জে বাগদা চাষীদের মারাত্বক লোকসানের মুখে ফেলেছে। চাষীরা চরম হতাশ এবং ক্ষতিগ্রস্থ। কালিগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অফিস সুত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৫ হাজার ঘেরের আয়তন ১৬০০ হেক্টর। সাড়ে ৬ হাজার মেট্রিক টন চিংড়ী মাছ উৎপাদন হওয়ার কথা এবছর।
সে হিসেবে হেক্টর প্রতি ৪০০ কেজি বাগদা উদপাদন লক্ষ্যমাত্রা চাষীদের। কিন্তু মৌসুমের শুরুতে বড় ধরনের ধাক্কা খেল বাগদা চাষীরা।উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের বেড়াখালী গ্রামের বাগদা চিংড়ী চাষী শাহাদাৎ হোসেন, নয়ন, নূরুল আমিন, ফকরুল ইসলাম, শাহ উদ্দীন মীর, আনারুল ইসলাম, মুকুল শাহাজী সহ আরও অনেক বাগদা চাষীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে যে, সবে কেজিতে ৬০টি সাইজ বাগদা হয়েছে। তার মধ্যে হটাৎ মাছ মরা শুরু হয়েছে।
আমরা চরম ক্ষতিগ্রস্থ। আমরা অধিকাংশ চাষী সমিতির লোন নিয়ে বাগদা চিংড়ী চাষ করেছি। এখন আমাদের মাথায় হাত উঠে গেছে। চোখে শষ্যর ফুল দেখছি।
শ্রীখলা গ্রামের চিংড়ি চাষী শরিফুল ইসলাম বলেন,সমিতির লোন নিয়ে মাছ চাষ করেছি। প্রতি গোনে গোনে মাছ ছেড়েছি। দুইকোটার মাছ মারা গেছে। মাছ মরে নিচে পঁচে গেছে। একই গ্রামের বাগদা চিংড়ী চাষী রাজিউন আহম্মেদ বলেন আমার তিনটি ঘের মিলে ১৪ বিঘা। আমি ১ লক্ষ ২০ হাজার বাগদা রেনু ছেড়েছি। কিন্তু তার অধিকাংশ মারা গেছে।
আশপাশের ছোট বড় সব ঘেরের নিদারুন করুণ অবস্থা। পাশের ঘেরের মনিরুল ইসলাম, কাজী হালিম, হাসানুর, ইউসুফ, মোমিন সহ এলাকার সকল মৎস্য চাষীর ঘেরে বাগদা মড়ক লেগেছে। এর মধ্যে কেউ কেউ ঘের শুকিয়ে নতুন করে চিংড়ী চাষের উপযোগী করার চেষ্টা করছে। ইতোমধ্য বাগদা চাষীদের জমির হারি, পোনা ও খাবারের টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। এই পুঁজি ফেরার কোন উপায় নেই। তার পরেও দায় শোধ করতে হবে। এখন আপনারাই বলুন আগে বাগদা চাষ করবো নাকি দায় পরিশোধ করবো। এমনই নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে কালিগঞ্জ উপজেলার বাগদা চিংড়ী চাষীরা দিন পার করছে।
বিষয়টি নিয়ে কালিগঞ্জ উপজেলা সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (নি. বে.) তৌকির আহমেদ এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন যে, আমি চাষীদের কাছে শুনেছি মড়কের কথা, তারা লোকাল মার্কেট থেকে বোগদা পোনা কিনেছিল। এছাড়া সম্প্রতি তারা পানি পরিবর্তন করেছে। একজনের ঘেরে ভাইরাস লাগা পানি যখন খালে ছেড়ে দেয় তখন অন্য ঘের সেই ভাইরাস যুক্ত পানি নিজের ঘেরে ঢুকায়। একারনে বেশী ভাইরাস লাগে। অবশ্য এসময় তারা বিলিসিন পাউডার ব্যবহার করিনি পানি শোধন প্রক্রিয়া নেয়নি। একারনে ঘেরে মাছ মারা যাচ্ছে।
একবার ভাইরাস ঢুকে গেলে তার বিপরীতে কোন এন্ট্রিবায়োটিক নেই। এন্ট্রিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় ব্যাকটোরিয়া নিধনের জন্য। একারনে ভাইরাস ঢুকলে ঔষধ কাজ করেনা। তারপরেও আমি এলাকার ঘের গুলো ভিজিট করবো। এর পাশাপাশি চাষীরা যদি পানি ও মাটি নিয়ে কালিগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অফিসে আসে আমি পরীক্ষা করে দেব। এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেব।