বিলাল হোসেন, শ্যামনগর ব্যুরো : খোলপেটুয়া নদীর জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান। আবার সাম্প্রতি নদীর মধ্যে নওয়াবেঁকী বাজারের মৎস্য আড়ৎদাররা প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ ফুট জায়গা জুড়ে খোলপেটুয়া নদী ভরাট করেছে। নদীর জায়গা দখল করে আড়ৎ নির্মাণ করার পাঁয়তারা করছে। শুধু এই দুটি জায়গা নয়, নওয়াবেঁকী বাজারের খোলপেটুয়া নদী সংলগ্ন এলাকা জুড়ে চলছে নদী দখলের এমন প্রতিযোগিতা।
নদী দখলে নিয়ে কার আগে কে স্থাপনা নির্মাণ করতে পারে এ নিয়েই রফাদফা। কেউ নদীর বাঁধে, কেউ নদীর জেগে উঠা চরে গড়ে তুলছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ আলিশান ভবন। দখলকারীদের এমন প্রতিযোগিতা প্রকাশ্যে চলতে থাকলেও নীরবে-নিভৃতে রয়েছে প্রশাসন। শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়ন ও পদ্মাপুকুর ইউনিয়নের সীমানার মাঝ দিয়ে প্রবহমান খোলপেটুয়া নদী দখল করে এসব স্থাপনা তৈরির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানায়, প্রশাসনের লোকজন এসে দেখার পর কয়েকদিন কাজ বন্ধ থাকে। কিন্ত রহস্যজনক কারণে কিছুদিন পর আবারো চলে ভবন নির্মাণের কাজ। এমন প্রশাসনের চোর-পুলিশ খেলার মাঝেই নদী দখল করে গড়ে উঠছে একের পর এক অবৈধ স্থাপনা। বিশেষ করে গত পাঁচে আগস্ট রাজনৈতিক পট পরবর্তী প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগের পর থেকে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে স্থানীয় একাধিক ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি।
স্থানীয় মনিরুজ্জামান জুলেট বলেন, খোলপেটুয়া নদী দিন দিন প্রভাবশালী ও ব্যবসায়ীদের দ্বারা দখল হয়ে যাচ্ছে। এতে নদীর গতিপ্রবাহ থেমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। খোলপেটুয়া নদী রক্ষায় নওয়াবেঁকী বাজারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তা কখনোই বাস্তবায়ন হয়নি। এতে ধীরে ধীরে খোলপেটুয়া নদী গিলে খাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী ও ব্যবসায়ীরা। এভাবে চলতে থাকলে কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে নদীটি।
স্থানীয় ছফিরুন্নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক জি.এম. নাসির উদ্দীন বলেন, নদী আইনে বলা হয়েছে নদী দখল, অবকাঠামো নির্মাণ, মৎস্য চাষ, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হবে। অথচ প্রশাসনকে বৃদ্ধি আঙুল দেখিয়ে খোলপেটুয়া নদী দখল করা হলেও প্রশাসন নীরবে-নিভৃতে রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আল হেলাল বলেন, টানা কয়েকদিন ঈদের ছুটি থাকার সুযোগে নওয়াবেঁকী বাজারের পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা ও খোলপেটুয়া নদী দখলের হিড়িক পড়েছে। নওয়াবেঁকী বাজারের খাস জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে স্থায়ী দোকানঘর।
এবিষয়ে নাওয়াবেঁকী বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি বলেন, আমি বারবার নিষেধ করার সত্বেও আমার নির্দেশ অমান্য করে পাকা ঘর নির্মাণ করছে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এর নির্দেশে বাজারের সকল প্রকার অবৈধ পাকা স্থাপনা বন্ধ রাখার নির্দেশনা সম্মলিত সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয়দের অভিযোগ, নাওয়াবেঁকী বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে নাওয়াবেঁকী বাজারের একটি সিন্ডিকেট এই অবৈধ স্থাপনা তৈরি ও নদী দখলের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তারা মোটা অংকের টাকা নিয়ে প্রশাসন এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে এসব অবৈধ স্থাপনা তৈরি করছে।
এদিকে দিনের আলোতেই প্রভাবশালীরা বিরামহীন নদী দখলের উৎসব চালালেও নজরে আসছে না সংশ্লিষ্ট দফতরের। আর এসব অনিয়ম দৃষ্টিতে আনার পরও দায়সারা উত্তর স্থানীয় প্রশাসনের।
এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছাঃ রনী খাতুন বলেন, আমি বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। এছাড়াও নাওয়াবেঁকী বাজারে সকল প্রকার পাকা অবৈধ স্থাপনা বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপরও যদি কেউ কাজ করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।