বিলাল হোসেন, শ্যামনগর ব্যুরো : এখনও মেরামত হয়নি শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবনসংলগ্ন চুনকুড়ি নদীর বাঁধ। যেকোনো মুহূর্তে মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগরের সিংহরতলী গ্রামের চুনকুড়ি নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকতে পারে পানি।
সরেজমিনে ওই এলাকায় যেয়ে দেখা যায়, সুন্দরবনসংলগ্ন মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগরের সিংহরতলী গ্রামে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ ফুট বেড়িবাঁধ চুনকুড়ি নদীতে ধসে গেছে। যার সামান্য অংশ অক্ষত আছে। সেটাও যে কোন মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে।
এ থেকে নিজেদের সহায়-সম্পত্তির ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে স্থানীয় এলাকাবাসী স্বেচ্ছাস্রমে ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন চুনকুড়ি নদীর বাঁধকে বাঁচানোর জন্য কাজে নেমে পড়েছেন। গাছ কেটে নদীর পাড়ে গেড়ে ও বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। এছাড়াও রিং বাঁধের মাধ্যমে লোকালয়ে পানি প্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শুক্রবার রাতে চুনকুড়ি নদীর বাঁধে ভাঙ্গন ধরে। এর আগে গত ১০/২৫ দিন আগে ও এখানে ফাটল দেখা দেয়। তারা জানান যেকোনো মুহূর্তে জোয়ারের লবণাক্ত পানিতে প্লাবিত হওয়ার মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে বাঁধ সংলগ্ন মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের সিংহরতলী ও চুনকুড়ি গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী ১০ থেকে ১৫ টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। সেই সঙ্গে অসংখ্য মাছের ঘের ভেসে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মাঝে।
চুনকুড়ি ও সিংহরতলীসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দারা চুনকুড়ি নদীর ভাঙনে প্লাবিত হওয়ার ভয়ে রয়েছেন। নিজেদের স্বার্থে ভাঙন মেরামতে তাঁরাও এগিয়ে এসেছে, কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারবে কিনা সেই শঙ্কায় রয়েছেন তারা। তাদের অভিযোগ, কয়েক দিন আগে বেড়িবাঁধটিতে ফাটল দেখা দিলে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হলেও ব্যবস্থা নেইনি তারা। জরুরিভিত্তিতে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা না করায় তা ধসে পড়ছে।
স্বেচ্ছায় ভাঙ্গন স্থানে কাজ করা মতলব হোসেন নামের একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আমি যখন গতকাল সকালে শুনেছি আমাদের এলাকার চুনকুড়ি নদীর বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে তখন থেকে ভাঙ্গন স্থানে এসে কাজে নেমে পড়েছি। এখানে এলাকাবাসীর সাথে মিলে খেয়ে না খেয়ে গাছ কেটে এগুলো গারিয়ে বস্তায় বালি ভরে নদীর ভেঙে যাওয়া বাঁধে ফেলেছি যেন বাঁধ ভেঙে পানি আমাদের গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে। আমরা এলাকাবাসী অনেক আতংকে আছি না জানি কখন পানি ঢুকে পড়ে আমাদের ঘর-বাড়িতে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, কয়েকদিন আগে এই স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছিল। সেই সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিতও করা হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। এখন এই স্থানে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত কি হবে উপর আল্লাহ জানে।
এদিকে শনিবার সিংহরতলীর চুনকুড়ি নদীর ভাঙন পরিদর্শনে গিয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছাঃ রনী খাতুন বলেছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধটি মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সাতক্ষীরা-১ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী প্রিন্স রেজা বলেন, গত শনিবার থেকে সিংহরতলী এলাকার বেড়িবাঁধ মেরামতের চেষ্টা করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তরাও ভাঙ্গন স্থানে থেকে কাজ তদারকি করছেন।
