সকাল ডেস্ক : বীরমুক্তিযোদ্ধা শহিদ শামসুদ্দোহা খান কাজলের মাতা শামসুরন্নাহার খানম (৯৬) আর আমাদের মাঝে নেই। পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহীকে শোক সাগরে ভাসিয়ে তিনি মঙ্গলবার (৩ জুন) সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোলস্থ খানপাড়ায় নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি ইন্তেকাল করেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। তিনি চার ছেলে এবং তিন মেয়ে জননী ছিলেন। শহিদ মাতা শামসুরন্নাহার খানম ছিলেন পলাশপোলের আশরাফ উদ্দিন খানের সহধর্মিনী। একই সাথে দৈনিক সাতক্ষীরার সকাল পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক তারেকুজ্জামান খানের ফুফু। মঙ্গলবার জানাজা নামাজ শেষে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এসময় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন। জানা যায়, মহান মুক্তিযুদ্ধে সাতক্ষীরা জেলার ছিল গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। মহান মুক্তিযুদ্ধে সাতক্ষীরার যে ক’জন শহিদ হয়েছিলেন তাদেরই একজন ছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা শহিদ শামসুদ্দোহা খান কাজল। দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় সাতক্ষীরার সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষ মুক্তির আকাক্সক্ষায় হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল, ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে জীবন মরণ যুদ্ধে। ১৯৭১-র ২৫ মার্চ থেকে সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই সারাদেশ উত্তাল হয়ে উঠেছিল বিভিন্ন দাবীতে। ২ মার্চ পালিত হয় হরতাল, ৩মার্চ ছিল বিক্ষোভ দিবস।
এদিন পাকিস্তানি দোসরদের গুলিতে সাতক্ষীরাতে নিহত হয় রিকশা শ্রমিক আব্দুর রাজ্জাক। আহত হয় আরও অনেকে। ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর সারাদেশের ন্যায় সাতক্ষীরাতেও শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। সাতক্ষীরায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তন্মধ্যে দেবহাটার টাউনশ্রীপুর যুদ্ধ অন্যতম। এই যুদ্ধে শহিদ হন ৮জন বীর যোদ্ধা। শহিদদের মধ্যে শামসুদ্দোহা খান কাজল ছিলেন একজন। চার ভাই আর তিন বোনের মধ্যে কাজল ছিলেন সবার বড়।
দেশের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার টানে খাতা-কলম ফেলে চলে যান মুক্তিযুদ্ধে। তার মেজ ভাই শামসুল আলম খান সাতক্ষীরার নবজীবনের সভাপতি। সেজ ভাই শামসুজ্জামান খান কমল ও ছোট ভাই সামসু কামাল খান লন্ডন প্রবাসি। বড় বোন আখতারি জাহান খান চৌধুরী, মেজ বোন শামীম আরা খান চৌধুরী ও ছোট বোনের নাম শাহীন আরা খান। বড় ছেলে কাজলের ফিরে আসার অপেক্ষায় ৫৪টি বছর কাটিয়েছেন শামসুরন্নাহার খানম। শহিদ কাজলের স্মৃতি স্মরণে সাতক্ষীরা শহরে একটি সড়কের নামকরণ করা আছে।
