নিজস্ব প্রতিনিধি : দক্ষিণ-পশ্চিমঞ্চলের সাতক্ষীরার তালা উপজেলার এক প্রাচীনতম মাদুর শিল্প বিলুপ্ত হতে চলেছে। কাঁচামাল সংকট এবং বাজারে কাঙ্ক্ষত দাম না পাওয়ায় শিল্পীরা এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। ঐতিহ্যবাহী এই কুটির শিল্পটি অচিরেই বিলুপ্ত হতে চললেও ৭৫ বছর ধরে তালা উপজেলা জুড়ে মাদুর বিক্রয় করছেন উপজেলার মাদরা গ্রামের স্বর্গীয় হরেন মন্ডলের ছেলে সুনীল মন্ডল। তার বয়স এখন ১১০ এসে ঠেকলেও যুবক বয়সের মতন উপজেলার জুড়ে মাদুর বিক্রয় করছেন তিনি।
তালা উপজেলার অনেক বছরের পুরনো মাদুর শিল্প। এ অঞ্চলের ২০০ থেকেব ৩০০ পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস ছিলো এ মাদুর শিল্প। কিন্তু কাঁচামাল সংকটের পাশাপাশি উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় মাদুর শিল্প বর্তমানে চরম সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কালের বির্বতনে সেই প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী এই কুটির শিল্পটি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এখনও কুটির শিল্পটি টিকিয়ে রাখতে মাদরা গ্রামটিতে এ কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন মাত্র দুই-একটি পরিবার। তাদের মধ্য অন্যতম হলেন স্বর্গীয় হরেন মন্ডলের পুত্র সুনীল মন্ডল।
জানা গেছে, মেলে জন্মে ছোট ছোট জলাশয়ে, খাল বিলে এবং নদীর চরে। বর্তমানে যে মেলে পাওয়া যাচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এছাড়াও প্লাস্টিক শিল্পের বিপ্লব, প্রয়োজনী উপকরণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পৃষ্টপোষকতা না থাকায় বিলুপ্ত হতে চলেছে ম্যালের তৈরী মাদুর।
বুধবার (১১ জুন) সকালে তালা বাজারে মাদুর বিক্রয় করছিলেন মাদরা গ্রামের ১১০ বছরের সুনীল মন্ডল। তিনি জানান, তাদের গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের নারীরা/পুরুষরা মাদুর বুননের সঙ্গে যুক্তছিলো। কিন্তু এখন আর তেমন কেউ মাদুর তৈরি/ বিক্রয় করে না। আমি প্রায় ৭৫ বছর ধরে মাদুর বিক্রয় করি । আমার ২ ছেলে সন্তান ও ১ কন্যা সন্তান আছে। বড় ছেলে ব্যবসা করে, ছোট ছেলে মাছ চাষ করে। আপনি এখনো কেন মাদুর বিক্রয় করেন এমন প্রশ্ন করা হলে সুনীল বলেন, এটা আমাদের বাপ-দাদার পেশা।
ইচ্ছা হলেও ছাড়তে পারি না। তাই সকাল হলে মাদরা গ্রাম থেকে প্রায় ৭-৮ কি:মি পথ পারি দিয়ে তালায় হেটে আসি। যদি মাদুর বিক্রয় হয় ভালো, না হলে আবার বাড়ি ফিরে যায় ।
তিনি আরোও বলেন, কয়েক বছর আগেও প্রতি কাউন মেলের দাম ছিল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। ফলে এক জোড়া মাঝারি ধরনের মাদুর উৎপাদনে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা ব্যয় হচ্ছে। অথচ বাজারে এ মাদুরের প্রতি জোড়ার পাইকারি দাম ৮০০ টাকা। এতে এক জোড়া মাদুরে ২০ থেকে ৩০ টাকার বেশি লাভ থাকছে না।
ফলে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। আধুনিক প্লাষ্টিক শিল্পের আধিক্যে চাহিদা কম অন্যদিকে একটি মাদুর তৈরিতে যে পরিমাণ খরচ হয় বাজারে ঠিক সে পরিমাণ দাম পাওয়া যায় না। তাই এ ব্যবসা আর কেউ করতে চায় না। তালা উপজেলা কৃষি অফিসার হাজিরা খাতুন জানান, আধুনিকতার ছোয়ায় মাদুর শিল্পটিও বিলুপ্তি হতে চলেছে। মাদুর তৈরির মূল কাঁচামাল ‘মেলে ঘাস’ এখন আর খুববেশি পাওয়া যায় না। এছাড়া বাজারে প্লাস্টিকের মাদুরের চাহিদা বেশি, দামও কম। ফলে কারিগররা এ শিল্প থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন।