বরষা গাইন, শ্যামনগর থেকে : প্লাস্টিক নামে এক ভয়কার দাবনের করাল গ্রাসের সংকটে বিশ্ববাসী। প্লাস্টিক নামের ভয়কার দানব যেন হয়ে উঠেছে পুরা পৃথিবীর নিয়ন্ত্রক। প্লাস্টিক এখন শুধু পরিবেশে নয় মানুষের শরীরেও জায়গা করে নিচ্ছে মহারাজের মত করে। মানুষের শরীরে এখন প্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে, এমনকি মাতৃভ্রুণেও প্লাস্টিক। প্লাস্টিক কি আমাদের উপকারী দানব যার কদর এত বেশী! তবুও আমরা নিজেরা সচেতন নয়। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ।
কিন্তু দেশের অধিকাংশ নদী প্লাস্টিকে ভরাট হচ্ছে, দূষিত হচ্ছে। ঠিক এমন দৃশ্য চোখে পড়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ ও ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নে। শুধু এই দুটি ইউনিয়ন নয়, শ্যামনগরের নদীবেষ্টিত ইউনিয়নগুলোতে ঘুরলে এমন দৃশ্য অহরহ। উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ও ঈশ্বরীপুর ইউনিয়ন একটি অন্যতম কৃষি অধ্যুষিত এলাকা।
যেখানে ৭০ শতাংশ জনগোষ্ঠী কৃষির উপর নির্ভরশীল। এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম জেলেখালী, কচুখালী কৃষিজমির পরিমান প্রায় ৫০০০ বিঘা এবং ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নে ধুমঘাট ও দঃ শ্রীফলকাটিতে কৃষিজমির পরিমান প্রায় ১৩৫০০ বিঘা। পশ্চিম জেলেখালী, কচুখালী ও ধুমঘাট ও দঃ শ্রীফলকাটির ভিতর দিয়ে বয়ে চলেছে আইবুড়ি নামের একটি নদী। আইবুড়ি নদীটি হরিনগর বাজার থেকে শুরু করে ঈশ্¦রীপুর ইউনিয়নের ধুমঘাট গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করেছে। নদীটির দুপাশে প্রায় ৬৫০ পরিবারের বসবাস।
যারা এই খালের পানি ব্যবহার করে সারা বছর কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। কিন্তু নদীটি প্লাস্টিকে ভরা এবং অবৈধ্য নেট পাটা থাকার কারণে তাদের জীবন জীবিকা এবং সাধারণ জীবনযাত্রা ব্যহত হচ্ছে।
স্থানীয় দঃ শ্রীফলকাটি গ্রামের প্রবীণ কৃষক সুবোল মুন্ডা (৬৩) বলেন, আমাদের নদীটি এখন খালে পরিণত হয়েছে। খালের মধ্যে প্রতিনিয়ত প্লাস্টিকের প্লেট, গ্লাস, পলিথিন, চিপসের প্যাকেট ফেলে পরিবেশ দূষন হচ্ছে একই সাথে অনেক স্থানে খালের মধ্যে গাছ পড়ে সে সমস্ত প্লাস্টিক পণ্য আটকে থাকছে এবং পানি চলাচলের বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে একদিকে যেমন নদীর নাব্যতা হারাচ্ছে অন্যদিকে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। নদীটিতে রয়েছে শোল, মাগুর, কৈ, টেংরা, ল্যাঠা, শিং, চ্যাং সহ বিভিন্ন স্থানীয়জাতের মাছ।
যা প্লাস্টিকের দূষনের কারণে তাদের প্রজননে বাঁধা সহ বংশ বিস্তার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন স্থানীয় জাতের মাছ। এ বিষয়ে স্থানীয় জনগোষ্টীর পক্ষ থেকে ভূধরচন্দ্র মন্ডল বলেন, আমরা খালটি প্লাটিকের দূষণমুক্ত করতে ও অবৈধ্য খালপাটা অপসারণের জন্য স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধির সাথে কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কোন ফলাফল আসেনি। এ বিষয়ে কথা বললে তারা আমাদের আশ্বস্ত করেন কিন্তু কোন পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।
তেরকাটি কৃষি উন্নয়ন সংগঠন ও হাসারচক পদ্ম কৃষক উন্নয়ন সংগঠনের সদস্যরা বলেন, আমরা চাই এই নদীতে প্লাস্টিক ফেলা বন্ধ হোক বা নেট পাটামুক্ত থাকুক। তবে আমরা সারা বছর কৃষিকাজসহ নদীর মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবো। তবে এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করলেও আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গৃহিত হয়নি। আমাদের কথা বা মতামতের গুরুত্ব পায় না। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর চাওয়া থাকলেও তাদের মতামত বা পরামর্শের গ্রহণযোগ্যতা হারায় এলাকার কিছু মুষ্টিমেয় ক্ষমতাধর মানুষের কারণে।
তারা ভয়ে চুপ হয়ে যায় মেনে নেয় সব ভাগ্য হিসেবে। হার মানে ক্ষমতার কাছে। তবে এই অঞ্চলের মানুষ স্বপ্ন দেখে, একটি অবৈধ দখলমুক্ত, নেটপাটামুক্ত ও প্লাষ্টিকমুক্ত আইবুড়ি খালের। এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হলে দুই ইউনিয়নের মানুষের কৃষিকাজ যেমন সহজ হবে। ঠিক তেমনি ভারসাম্য বজায় থাকবে প্রাকৃতিক পরিবেশের। সর্বোপরি সকল দাবি দাওয়া পূরণের জন্য শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহোদয়ের বিশেষ সুদৃষ্টি কামনা করেছেন অত্র এলাকাবাসী।