মঙ্গলবার , ২৪ জুন ২০২৫ | ১৫ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. আইন আদালত
  2. আন্তর্জাতিক
  3. আশাশুনি
  4. কলারোয়া
  5. কালিগঞ্জ
  6. কৃষি
  7. খুলনা
  8. খেলা
  9. তালা
  10. দেবহাটা
  11. বিনোদন
  12. যশোর
  13. শিক্ষা
  14. শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  15. শ্যামনগর

সাতক্ষীরায় চর্মরোগের হানা : জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও চিকিৎসক সংকটে জনদুর্ভোগ

প্রতিবেদক
satkhirar sakal
জুন ২৪, ২০২৫ ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিনিধি : জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতায় জর্জরিত সাতক্ষীরা জেলাজুড়ে ‘ঘরে ঘরে’ ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ। চুলকানি, দাউদ, একজিমাসহ নানা সংক্রামক ত্বকের সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। জেলার প্রধান দুটি সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র-সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। একদিকে রোগের যন্ত্রণা, অন্যদিকে বেসরকারি চিকিৎসার চড়া খরচ-এই দুইয়ের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছেন দরিদ্র ও নি¤œ-আয়ের মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা সাতক্ষীরার এই জনস্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া না হলে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জেলার সচেতন মহল।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাতক্ষীরার এই পরিস্থিতি। জেলার নদীভাঙন, জলোচ্ছ¡াস এবং দুর্বল বেড়িবাঁধের কারণে লোকালয়ে প্রায়ই লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে। দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ত পানির ব্যবহারের ফলে মানুষের ত্বকের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে স্ক্যাবিস, দাদ, একজিমার মতো ছোঁয়াচে রোগগুলো দ্রæত ছড়িয়ে পড়ছে।

ভুক্তভোগীদের হাহাকার : সাতক্ষীরা সদরের ফয়জুল্যাপুর গ্রামের গৃহবধূ ফিরোজা বেগম জানান, “গত ৩ বছর ধরে সারা শরীরে চুলকানি আর পাঁচড়া। ডাক্তাররা পুকুরের পানিতে গোসল করতে বারণ করেছেন, নানা রকম ওষুধ দিয়েছেন, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় শরীর দুর্বল হয়ে গেছে।” উপক‚লীয় উপজেলা শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালিগঞ্জসহ পুরো জেলার মানুষের দুর্ভোগের চিত্র প্রায় একই। লবণাক্ত পানি এখানকার মানুষের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।

শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের বাসিন্দা নমিতা রানী তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “প্রতিবছর বাঁধ ভেঙে লবণাক্ত পানি আমাদের এলাকায় ঢুকে পড়ে। এই পানি ব্যবহারের ফলে আমাদের মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। শরীরে চুলকানি হয়, ঘা-পাঁচড়া তো আছেই, সেই সাথে নারীদের বিভিন্ন ধরনের গোপন রোগও বাড়ছে।” তিনি আরোও বলেন, “পরিবারের প্রায় সবাই চুলকানিতে ভুগছি। চুলকাতে চুলকাতে চামড়া উঠে ঘা হয়ে গেছে। লজ্জায় নারীরা এই রোগ কাউকে দেখাতে পারে না, ফলে চিকিৎসা নিতে দেরি হওয়ায় অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে।” সাতক্ষীরা পৌরসভার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “সরকারি হাসপাতালে ৫-১২ টাকায় ডাক্তার দেখানো যেত। এখন ডাক্তার না থাকায় বেসরকারি চেম্বারে ভিজিটই লাগে ৫০০-৬০০ টাকা, তারপর হাজার টাকার ওষুধ। ওষুধের ওপর ছাড়ও কমে গেছে। আমরা গরিব মানুষ এত টাকা পাবো কোথায়?”

বিশেষজ্ঞ মতামত ও ভুল ধারণা : সাতক্ষীরা জেলা জলবায়ু পরিষদের সদস্য সচিব ও পরিবেশবিদ অধ্যক্ষ আশেক-ই এলাহী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এলাকায় তীব্র পানির সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় মিষ্টি পানির উৎসগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর পানি জমে থেকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এই জমে থাকা দূষিত পানির কারণে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। অন্য কোনো উপায় না থাকায়, মানুষ এই দূষিত পানিই দৈনন্দিন কাজে, এমনকি পান করার জন্যও ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। অধিকাংশ মানুষ এই পানি পান করে। খুব কমসংখ্যাক মানুষ তারা টাকা দিয়ে পানি কিনে পান করতে পারে। এই পানি স্বাস্থ্যসম্মত না হওয়ায় শরীরে খারাপ প্রভাব পড়ার ঝুঁকি বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক প্রাকৃতিক ও আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটে গেছে। বাতাস এবং পারিপার্শ্বিক লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় মানুষের শরীর, বিশেষ করে ত্বক, এর সাথে খাপ খাওয়াতে পারছে না। অতিরিক্ত গরম এবং মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে মানুষের গায়ে র‌্যাশ, ঘা এবং বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে, যা আগে ছিল না। এই পরিবেশবিদ আরও বলেন, আগে মানুষের খাদ্যাভ্যাস ভালো ছিল এবং তারা প্রোটিনযুক্ত খাবার পেত, যার ফলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও শক্তিশালী ছিল। কিন্তু এখন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে মানুষ আগের মতো পুষ্টিকর খাবার, বিশেষ করে প্রোটিন পাচ্ছে না। পুষ্টিকর খাবারের অভাবে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, যার ফলে রোগের প্রবণতা আরও বাড়ছে।

এই রোগের ব্যাপকতা বাড়ার কারণ হিসেবে চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মুসাদ্দিক হোসাইন খান বলেন, “এটি স্ক্যাবিস বা দাদের মতো ছোঁয়াচে রোগ। পরিবারের একজনের হলে অন্যদেরও হয়। অনেকেই লজ্জায় বা অবহেলায় শুরুতে চিকিৎসা করান না। ফার্মেসি থেকে মলম কিনে ব্যবহার করায় রোগের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। করোনার টিকার কারণে এটি হচ্ছে, এই ধারণাটি সম্পূর্ণ গুজব।” তিনি আরোও বলেন, এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ পরিবারের একজনের হলে অন্যদেরও হতে পারে। আক্রান্ত রোগীকে আলাদা রাখা, তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র (যেমন: তোয়ালে, বিছানার চাদর) আলাদাভাবে পরিষ্কার করা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদেরও সতর্ক থাকতে হবে।

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ও চিকিৎসক সংকট : সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকার বিষয়ে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম বলেন, “সদর হাসপাতালে একজন চিকিৎসক আছেন, যিনি সপ্তাহে তিন দিন রোগী দেখেন। তার মূল কর্মস্থল কালিগঞ্জে। চিকিৎসক সংকট কাটাতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।”

অন্যদিকে, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. কুদরত-ই-খোদা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাবে জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। ভৌগোলিকভাবে নিচু এই অঞ্চলের নদীভাঙন, জলোচ্ছ¡াস এবং ভঙ্গুর বেড়িবাঁধের কারণে প্রায়ই লোকালয়ে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে। দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা এবং লবণাক্ত পানির সংস্পর্শে আসার ফলে মানুষের ত্বকের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এর ফলে স্ক্যাবিস (খোসপাঁচড়া), দাদ, একজিমার মতো রোগগুলো সহজে ছড়িয়ে পড়ছে, যা মহামারির আকার ধারণ করার পথে।” তিনি আরোও বলেন, “মেডিকেল কলেজে চর্ম ও যৌন রোগের একমাত্র পদটি এক বছর ধরে শূন্য। ডা. মুসাদ্দিক হোসাইন খানকে কালিগঞ্জে বদলি করার পর আর কেউ আসেননি। আমরা একাধিকবার চিঠি দিয়েও কোনো সাড়া পাইনি।”

নাগরিক সমাজের দাবি : সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহŸায়ক আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এই জেলায় লবণাক্ত পানির কারণে চর্মরোগ বাড়ছে। অথচ প্রধান হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার নেই, এটা দুঃখজনক। আমাদের দাবি, অবিলম্বে সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হোক।”

চর্মরোগ এড়াতে যে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা
* পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: প্রতিদিন পরিষ্কার পানি দিয়ে গোসল করা জরুরি। শরীর, বিশেষ করে ভাঁজের জায়গাগুলো (যেমন – কুঁচকি, বগল, আঙুলের ফাঁক) গোসলের পর ভালোভাবে মুছে শুকনো রাখতে হবে। ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে ত্বকে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া সহজে জন্মায়।
*গরমকালে সুতির এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরা। খুব আঁটোসাঁটো পোশাক এড়িয়ে চলা, কারণ এতে ঘাম জমে ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক খানি বাড়ে। ঘামে ভেজা পোশাক বেশিক্ষণ পরে থাকবেন না।
* অন্যের ব্যবহার করা তোয়ালে, চিরুনি, জামাকাপড় বা সাবান ব্যবহার করবেন না। এই জিনিসগুলোর মাধ্যমে সহজেই ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ছড়াতে পারে, যা থেকে দাদ বা খোসপাঁচড়ার মতো রোগ হয়।
* অতিরিক্ত রোদ ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। বাইরে বের হওয়ার অন্তত ২০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। এটি ত্বককে রোদে পোড়া, অ্যালার্জি এবং দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি থেকে বাঁচায়।
* প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে ত্বক ভেতর থেকে আর্দ্র ও সতেজ থাকে। এর পাশাপাশি, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ ফল এবং শাকসবজি খেলে ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং ত্বক সুস্থ থাকে।

সর্বশেষ - সাতক্ষীরা সদর

আপনার জন্য নির্বাচিত

ইউটি হেলথ সান আন্টোনিও থেকে নাহিন তুনাজ্জিনা রাদিত’র স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন

শ্যামনগরের আটুলিয়ায় গ্রাম পুলিশকে মারপিটের অভিযোগ

কালিগঞ্জের মথুরেশপুর ইউনিয়নে ৬নং ওয়ার্ডে নৌকা প্রতিকের মতবিনিময় সভা

আশাশুনিতে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত

প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার/প্রতিষ্ঠানের মাঝে ঢেউটিন ও গৃহ-নির্মাণ অর্থ বিতরণ

বুধহাটায় সুধী ও সাংবাদিকদের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল

আশাশুনিতে প্লাস্টিক পলিথিন দুষণ প্রতিরোধে গণশুনানি

বিজ্ঞানী পিসি রায়ের বসতবাড়ী সংস্কার, পর্যটনকেন্দ্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবী

আশাশুনির পূজা মন্ডপ পরিদর্শনে ওসি নজরুল ইসলাম

বুধহাটায় প্রাক্তন সৈনিক কল্যাণ সংস্থার মাসিক সভা