সাংবাদিক আব্দুল মাজেদ ছিল সকলের প্রিয় একজন বহুমুখী বিরল প্রতিভাবান এবং অসাধারণ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন গুণী মানুষ। সদ্য প্রয়াত ক্ষণজন্মা এই মানুষটি একাধারে শিক্ষক,কবি, সাংবাদিক, রেফারি, সাংস্কৃতিমনা,সফল উদ্যোক্তা,ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে খুব দক্ষতার সাথে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়ে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
অত্যন্ত মিশুক বন্ধুবৎসল ও সদাহাস্যজ্বল সকলের প্রিয় এই মানুষটি আমাদের সবাইকে কাঁদিয়ে মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে গত ৬জুন রাত সাড়ে নয়টার সময় না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। পরদিন ৭জুন সকালে ঈদুল আজহার নামাজের আগেই তার জানাজা নামাজ শেষে সদরের ভালুকা চাঁদ পুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।মৃত্যুর ২ দিন আগে তিনি চাঁদ পুর বাজারে হঠাৎ ব্রেন স্ট্রোক করলে তাকে সাতক্ষীরা সিবি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরদিন আমরা কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী সিবি হাসপাতালে গিয়ে তার চিকিৎসার খোঁজ খবর নেওয়ার পর খুব মর্মাহত হলাম। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারলাম তাকে হয়তো আমরা হারাতে যাচ্ছি। আর তখন থেকেই আমরা প্রতিটি মুহূর্তে আশংকা করছিলাম এই বুঝি খারাপ কোন সংবাদের। ঈদুল আজহার আগের রাতে তার মৃত্যুর ফলে ওই পরিবারসহ আমাদের সকলের আনন্দের ঈদ মুহূর্তে বিষাদে রুপ নেয়। তার এই আকস্মিকভাবে মৃত্যুর খবরটা লিখতে গিয়ে বারবার হাত কাঁপছিল।
তিনি খুব সহজে মানুষকে আপন করে নিতে পারতেন। জন্মিলে মরিতে হবে এই চিরন্তন সত্যটা মানতে মাঝে মাঝে বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে চৌচির হয়ে যায়। যদিও গণমাধ্যম কর্মীদের লিখতে বসলে সব আবেগ অনুভূতি,মায়া মমতা সম্পর্ক এসব থাকতে নেই,কিংবা ভূলে থাকতে হয়। তারপরও রক্তমাংসের মানুষ বলে হয়তো চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে, হাত-পা অবশ হয়ে আসে। কিন্তু এরপরও সবকিছু সামলিয়ে পরিস্থিতি যত কঠিন হোক তা আমাদের লিখতে হয় পাঠকদের জন্য। কিন্তু কিছু কিছু খবর লিখতে গিয়ে বারবার হোঁচট খেতে হয়।
হাত পা অবশ হয়ে আসে। মনে সাহস করে আবারও লিখতে গিয়ে থমকে যায়। কারণ দিন শেষে আমরাও মানুষ, আমাদেরও আবেগ অনুভূতি আছে। জীবনে চলার পথে অসংখ্য মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু সবাই কে খুব আপন করে পাওয়া যায় না।এরমধ্যে কিছু মানুষ তো খুব অল্প সময়ের মধ্যে হৃদয়ের মনিকোঠায় আলাদা করে ঠায় নেয়। আব্দুল মাজেদ ছিল আমার কাছে তাদেরই একজন। তার মধ্যে বেশ অসাধারণ কিছু ক্যারিশম্যাটিক ক্যাপাসিটি ছিল।
যেখানে আমরা খুব সহজ কথা সহজে বলতে পারিনা সেখানে তিনি যেকোন পরিস্থিতিতে খুব কঠিন কথা গুলো সহজেই বলতে পারতেন। তার অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য বেশ প্রশংসিত ছিল।তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রে বেশ দক্ষতার সঙ্গে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। একজন বিশ্বস্থ সৎবন্ধু হিসেবে তাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি যাকে চোখবুঁজে সুখ দুঃখের সব কথা নির্দিধায় শেয়ার করা যায়। অত্যন্ত মিশুক এই মানুষটির মধ্যে যে কাউকে খুব সহজে আপন করে নিতে পারতেন। তিনি আজ আর আমাদের মাঝে নেই, একথা ভাবতেই খুব কষ্ট হচ্ছে।
তবুও নিয়তির উপর আমাদের কোন হাত নেই। তাকে আমরা হয়তো আর কোনদিন কোন অনুষ্ঠানে বহু গুণে গুণান্বিত নির্মল আনন্দ নিয়ে সবার মনের খোরাক জুগিয়ে জয় করে নেওয়া প্রিয় সহকর্মীকে ফিরে পাবো না।তার শুণ্যতা অপুরনীয়, আমরা সবসময় অনুভব করবো। মাত্র ৫বছরের বন্ধুত্বে তার সাথে আমার অনেক স্মৃতিময় মুহূর্তগুলো নিয়ে অন্য কোন একদিন লিখবো ইনশাআল্লাহ। পরিশেষে মহান আল্লাহর নিকট কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি তার সব ভূল ত্রুটি গুলোকে মাফ করে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান বানিয়ে দেন আমিন।
লেখক-জি এম আমিনুল হক
