দেবহাটা প্রতিনিধি : দেবহাটায় জমি দখলে নিতে হামলা ও মারপিটে দু’পক্ষের ৬জন গুরুতর আহত হয়েছে। গত শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে উপজেলার চাঁদপুরে এ হামলা ও মারপিটের ঘটনাটি ঘটে। এতে দুপক্ষের অন্তত ৬ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। এদিকে হামলা ও মারপিটের ঘটনায় উভয়পক্ষের পাঁচজন করে মোট ১০ জনকে আসামী করে দেবহাটা থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করেছেন দু’পক্ষই।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানায়, চাঁদপুর গ্রামের মৃত শেখ জামাল উদ্দীন তার জীবদ্দশায় প্রায় ৭০ বছর আগে রামনাথপুর মৌজায় ৭৬ শতক জমি নিলামে নিজের বড় ছেলে সাজ্জাদ আলীর নামে ক্রয় করে সেখানে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করতেন। বড়ভাই সাজ্জাদের নামে পিতার ক্রয়কৃত ওই জমির দাবিদার ছিলেন ছোটভাই শেখ এরশাদ আলীসহ অন্যান্য ওয়ারেশগণ।
বাবার মৃত্যুর পরও দুইভাই শেখ সাজ্জাদ আলী ও এরশাদ আলী ওই জমিতে শান্তিপূর্নভাবে বসবাস করছিলেন। প্রায় একযুগ আগে সাজ্জাদ আলী এবং বছর দশেক আগে এরশাদ আলী মারা গেলে তাদের উত্তরসূরীরা সেখানে বসবাস করতে থাকে। বছর খানেক আগে আকর্ষিক সাজ্জাদের দুই ছেলে শামসের হোসেন শামু ও শওকাত হোসেন শামীম গোপনে ৭০ শতক জমি পাশ্ববর্তী জাহাঙ্গীর হোসেন নামের এক ব্যাক্তির কাছে বিক্রি করেন।
অদ্যবধি ওই জমি নিজেদের দখলে থাকলেও চাচতো ভাই কর্তৃক বিক্রির ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে বাস্তুচ্যুত হওয়ার উপক্রম ঘটে সেখানে বসবাসরত এরশাদ আলীর ৯ ছেলের। একপর্যায়ে দাদার ক্রয়কৃত জমি হওয়ায় তাতে অংশ দাবি করে এরশাদ আলীর সন্তানরা চাচতো ভাইদের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলাও দায়ের করেন। কিন্তু তাতে থেমে থাকেনি জমির ক্রেতা জাহাঙ্গীর ও তার পরিবারের সদস্যরা। বিভিন্ন সময়ে তারা এরশাদ আলীর সন্তানদের বাস্তুচ্যুত করে জমিটি দখলে হুমকি ও অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিল।
শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে জাহাঙ্গীর, তার দুই ভাই হাফিজুর রহমান, তৌহিদুর রহমান, ভাবি খাদিজা ও ভাতিজা শাহাজুল লাঠিশোঠা ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জমিটি দখলে নিয়ে এরশাদ আলীর ছেলেদের বসতভিটায় হামলা চালায়। এসময় বাঁধা দিতে গেলে এরশাদ আলীর ছেলে কায়েস হোসেন (২৮) কে একা পেয়ে পিটিয়ে মাথা ফাঁটিয়ে দেয় জাহাঙ্গীর ও তার পরিবারের লোকজন। রক্তাক্ত অবস্থায় কিছুক্ষণ অচেতন থাকার পর জ্ঞান ফিরলে কায়েস হোসেন দেখতে পান জাহাঙ্গীর ও তার লোকজন তাদের বাপ-দাদার বসতভিটা জোরপূর্বক দখল করছে। এসময় সেও হাতে লাঠি তুলে নেয়।
বাপ-দাদার বসতভিটা রক্ষার্থে একপর্যায়ে সে একাই পিটিয়ে জখম করে জাহাঙ্গীর ও তার লোকজনদের। পরে স্থানীয়রা দুপক্ষের ৬জনকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে আহতদের মধ্যে এরশাদ আলীর ছেলে কায়েসের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
এঘটনায় এরশাদ আলীর স্ত্রী কৌছিয়া খাতুন বাদী হয়ে জাহাঙ্গীরসহ তার পক্ষের ৫ জনকে আসামী করে একটি মামলা এবং জাহাঙ্গীরের বোন রীনা খাতুন বাদী হয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন কায়েস হোসেন সহ তাদের পক্ষের ৫ জনকে আসামী করে দেবহাটা থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন। এব্যাপারে দেবহাটা থানার ওসি মো. বাবুল আক্তার বলেন, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে মারপিটের ঘটনাটি ঘটে। এতে দুপক্ষের অন্তত ৬জন আহত হয়। আহতরা সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এঘটনায় মোট ১০জনকে আসামী করে দুপক্ষই থানায় পৃথক মামলা দায়ের করেছেন।