বিলাল হোসেন শ্যামনগর প্রতিনিধি : উপক‚লের অধিংশ মানুষ সুন্দবনের উপর নির্ভরশীল। সুন্দরবনকে ঘিরেই তাদের জীবন-জীবিকার পথ চলা। পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র রক্ষায় মাছ ও প্রাণীদের প্রজনন সময় হিসাব করে সরকারি ভাবে বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। সুন্দরবন ঘিরে উপকূলের এলাকার জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল।
এ কারণে পাশাপাশি সরকারি ভাবে একটা বড় রাজস্ব আসে সুন্দরবন থেকে। তিন মাস পাশ বন্ধ থাকায় সরকারি রাজস্ব নেই মোটেও। ২০২০-২১ বর্ষে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত ট্যুরিষ্ট থেকে সরকারি রাজস্ব এসেছে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। আর মাছ ও কাঁকড়ার পাশ থেকে রাজস্ব এসেছে ৫ লক্ষ টাকা। তবে ২০২২ সাল থেকে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত পাশ বন্ধ থাকায় কোন রাজস্ব আদায় হয়নি। পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র রক্ষা। মাছ ও প্রাণীদের প্রজনন সময় হিসাব করে সরকারি ভাবে বন্ধ ঘোষনা করায়। অসহায় হয়ে পড়েছে সুন্দরবনে সাথে জড়িত সকল পেশার মানুষ। সাতক্ষীরা রেন্জে মাছ কাঁকড়া ধরার ২ হাজার ৮ শত ৪৫ বিএলসিতে ৮ হাজার ৫ শত ৩৫ জন জেলে মাছ কাঁকড়া ধরে।
ট্যুরিষ্ট বিএলসি আছে ৮২ টিতে যার উপর নির্ভর করে ১৬৫ জন মানুষ। সরকারি আইন অনুযায়ী ২০২২ সাল থেকে জুন হতে আগস্ট মাস পর্যন্ত সুন্দরবনের পরিবেশ ঠিক রাখার জন্যে মাছে ও কাঁকড়া প্রজননে দিক বিবেচনা করে। এই তিন মাস সুন্দরবনে ভিতরে সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকে বিপকে পড়ে সুন্দরবনের পেশার সাথে জড়িত থাকা মানুষরা। তিন মাস পাশ বন্ধ থাকায় কোন পর্যটক না আসায় ক্ষতির মুখে পড়ে ট্যুরিষ্ট বোর্ট মালিকরা।
এছাড়া পেশা পরিবর্তন করতে না পারা জেলে বাউলীরা বসে থাকে সুন্দরবনের দিকে তাকিয়ে। সাধারণ জেলে বাউলীরা সুন্দরবনে যেতে না পেরে মাহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদ নিয়ে দিন পার করে থাকে। একদিকে তারা পারছে না নিজের পেশাকে পরিবর্তন করতে। অন্যদিকে বছরে ৩ মাস সরকারি ভাবে সুন্দরবন বন্ধ থাকায় পড়তে হয় সমস্যায়। স্থানীয়ও ব্যাবসায়ীরা চেয়ে থাকে পর্যটকের দিকে তাকিয়ে। সুন্দরবন বন্ধ থাকায় বাইরে থেকে পর্যটক না আসতে পারায়। বেচা বিক্রি করতে না পেরে অসহায় দিন পর করে। তিন মাস পাশ বন্ধ থাকায় জেলেদের জন্যে সরকারি ভাবে ৮৬ কেজি চাউল বাজেট করা হলেও তাও নিয়ে নয় ছয়। প্রকৃত জেলেরা বন্চিত থাকে এ সুবিধা থেকে।
এ তিন মাস সুন্দরবনের পাশ বন্ধ থাকার বিষয় প্রাণবৈচিত্র্য ও প্রতিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, সুন্দরবনের সাতক্ষীরা ও খুলনা রেঞ্জ ইলিশের গুরুত্বপূর্ণ বিচরণ অঞ্চল নয়। তারপরও ইলিশ নিষেধাজ্ঞার সময় সুন্দরবনে আহরণ বন্ধ থাকে। আবার জুন থেকে আগস্ট ৯০ দিন সুন্দরবনে নিষেধাজ্ঞা আছে। এ সময় কাকড়াও প্রজনন মওসুম নয়। এমনকি সুন্দরবনের বেশিরভাগ গাছের পুষ্পায়ন ঘটে শীত, বসন্ত ও গ্রীষ্মে। নব্বই দিন কেন সুন্দরবন বন্ধ তার কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক পাবলিক ব্যাখ্যা বনবিভাগ কোথাও প্রচার করেনি।
এতে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জেলে, বাগদি, মৌয়াল, বাওয়ালি বনজীবীদের খেয়ে না খেয়ে দূর্বিষহ দিন কাটাতে হচ্ছে। করোনা মহামারী ও বৈশ্বিক মন্দার পর অস্থির এই বাজার পরিস্থিতিতে পরিবেশ বাচানোর মিথ্যা সাফাই করে লাখ লাখ বনজীবীদের সাথে এমন করা অন্যায়। সতিকার অর্থে সুন্দরবন সুরক্ষা করতে হলে সুন্দরবনের প্রতিটি নদীর উজান থেকে ভাটির প্রবাহ ঠিক রাখতে হবে, দখল ও দূষণমুক্ত রাখতে হবে।
কেবল তিন মাস নয়, বছরের প্রতিটি ঋতুই সুন্দরবন সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সুন্দরবন এলাকায় কিছু ধনী মানুষকে নরমখোলের কাকড়া চাষকে অনুমতি দিয়ে গরীব জেলেদের জন্য তিন মাস সুন্দরবন বন্ধ করে কোনোভাবেই এই বনের বাস্ততন্ত্র ও প্রতিবেশ সুরক্ষা হবে না। মুন্সীগঞ্জ গ্রামের জেলে ছাকাত আলী বলেন, বাপদার পেশা পরিবর্তন করতে পারিনে বলে সুন্দরবনে মাছ ধরি।কিন্তু বছরে ৫ মাস বন্ধ থাকে এর বেশি সমস্যা হয় এই ৩ মাসে। পাশ বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে চলতে খুব কষ্ট হয়ে যায়। সংসার চালাতে মাহাজনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে তাই চলতে হয়। ট্যুরিষ্ট বোর্ড মালিক আব্দুল হালিম বলেন, তিন মাস পাশ বন্ধ থাকায় পর্যটক না আসায় লাখ লাখ টাকা খরচ করে বোর্ড বানানো লচ হয়ে যায়। এছাড়া বোর্ট না চালালে জিনিষ পাতি নষ্ট হয়ে যায়। সেগুলো ঠিক করতে অনেক টাকা লাগে।
ব্যাবসায়ী মিজান গাজি বলেন, পর্যটক আসলে ভালো বেচা কেনা হয়। পাশ বন্ধ থাকায় পর্যটক না আসায় বেচা কেনা তেমন হচ্ছে না খুব কষ্টে আছি। সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মকর্তা কে এম ইকবল হোসেন চৌধুরী বলেন, পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র রক্ষা। মাছ ও প্রাণীদের প্রজনন সময় হিসাব করে সরকারি ভাবে বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।
