নিজস্ব প্রতিনিধি : ২০ সেপ্টেম্বর (বুধবার)সকাল থেকে সাতক্ষীরার শহীদ আব্দুল রাজ্জাক পার্কে তিনশত বছরের পুরাতন ঐতিহ্য গুড়পুকুর মেলা শুরু হয়েছে। প্রতিবছরের মত এবার ও ভাদ্র মাসের শেষ দিন অর্থাৎ ৩১ ভাদ্র মেলাটি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুইদিন পরে ‘শ্রীশ্রী মা মনসা দেবী’র পূজা উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয় ‘গুড়পুকুরের মেলা’।
এই ‘গুড়পুকুরের মেলা’ গ্রাম বাংলার লোকজ সংষ্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য এখনও সাতক্ষীরার সংস্কৃতির মূলধারাটি বহন করে চলেছে। গুড়পুকুরের মেলাটি উৎপত্তি সম্পর্কে জানা যায়। পৌরাণিক ইতিহাসে কথিত আছে, সাতক্ষীরার জমিদার বংশীয় পরিবারের পূর্বপুরুষেরা কুলিন ব্রাহ্মণ ছিলেন। তাঁদের পূর্বপুরুষদের জনৈক চৌধুরী বংশীয় জমিদার ক্লান্ত অবস্থায় শেষ ভাদ্রের ভ্যাপসা গরমে সাতক্ষীরার পলাশপোল বটগাছ তলায় বটের ছায়ায় একটু জিরিয়ে নেয়ার জন্য বসলেন। বটের ছায়ায় বসতে না বসতেই ঘুম এসে গেল তাঁর। বটের শেকড়ে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন তিনি।
বট গাছের ছায়ায় গাছতলায় ঘুম। তখন বটগাছের পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যের তীব্র কিরণ এসে পড়ল জমিদারের মুখে। রৌদ্রের তাপে ঘুম ভেঙে যেতে লাগলো তাঁর। অস্বস্থি বোধ করলেন তিনি। সেই সময় বট গাছের মগডালে ছিল এক পদ্মগোখরো সাপ, সে তা লক্ষ করল। আস্তে আস্তে পদ্মগোখরোটি নেমে এলো নিচে। যে পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যরশ্মি এসে জমিদারের মুখে পড়েছে, ঠিক সেখানে ফণা তুলে দাঁড়ালো পদ্মা গোখরার ফণার ছায়া এসে পড়ল জমিদারের মুখে। তিনি আরাম পেয়ে আবারও ঘুমিয়ে পড়লেন।
তখন তিনি এলাকার সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ডেকে বললেন, এখানে ‘শ্রীশ্রী মা মনসা দেবীর পূজা’ করতে হবে। সেদিন ছিল ভাদ্র মাসের শেষ দিন অর্থাৎ ৩১ ভাদ্র। ১২শ’ বঙ্গাব্দের শুরুর দিকের কোন এক বছর। তখন থেকেই সাতক্ষীরা শহরের প্রাণ কেন্দ্র পলাশপোল গ্রামে সেই বৃহৎ বটবৃক্ষের তলায় প্রতিবছর ভাদ্র মাসের শেষ দিন অর্থাৎ ৩১ ভাদ্র “শ্রীশ্রী মা মনসা দেবী”র পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
মেলায় বিভিন্ন প্রকার আসবাবপত্র, মনোহরের দোকান, খাবারের দোকান, নাগরদোলা, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পোড়ামাটির জিনিসপত্র সহ সকল প্রকার প্রসাধনী সব মিলিয়ে ১৫০ টি দোকান বসেছে। মেলাটি ১৫ দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে। গুড়পুকুরের মেলায় সার্বিক সহযোগিতা করছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও সাতক্ষীরা পৌরসভা।