জিএম আব্বাস উদ্দিন : বৃষ্টিজনীত কারণে সখিপুর মোড়ে অবস্থিত সাস অফিসের মধ্যে প্রবেশ করেই দেখা যায় ০৬ জন রোগী (মা-শিশু, মেডিসিন ও ডায়বেটিস) ওয়েটিং রুমে অবস্থান করছে এবং চিকিৎসা চেম্বারে কয়েকজন রোগী বসে একে একে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মঙ্গলবার রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উনারা ১০০ টাকার একটি স্বাস্থ্যকার্ডের বিনিময়ে পরিবারের সকল সদস্যদের স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে ০১ বছরের জন্য রেজিষ্টার্ড চিকিৎসক দ্বারা সখিপুর সাস অফিসের স্বাস্থ্যসেবা ইউনিট থেকে, বাড়িতে বসে, নিজ গ্রাম থেকে এবং সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদে আয়োজিত স্বাস্থ্যক্যাম্পের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করে থাকেন।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা (সাস) অফিসের স্ট্যাটিক ক্লিনিকে উপস্থিত চিনেডাঙ্গা গ্রামের রোগী, আঞ্জুয়ারা খাতুনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমার বাচ্চাকে (আবু হুরাইরা- ১১ মাস) আমি ঠান্ডা-কাশির কারনে ২ মাস আগে বাড়ির পাশের স্ট্যাটিক ক্যাম্পরতে দেখালাম, এ্যালার্জির সমস্যার জন্য মাঝে মাঝে মনোজ হালদার স্যারকে দেখাইয়া প্রেসক্রিপশন করি নেই, আজও আমার আক্কেল মাড়ির ব্যথার সমস্যা আমার বাচ্চার ঠান্ডাকাশির জন্য প্রেসক্রিপশন লিখে নিয়েছি। আমরা হতদরিদ্র পরিবার এখানে চিকিৎসা নিলে খরচ কম হয় এবং আল্লাহর রহমতে উপকার পাই।
এ বিষয়ে সমৃদ্ধি প্রকল্প অফিসের কর্মসূচি সমন্বয়কারী অফিস ইনচার্জ ওয়ালিদ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা (সাস) ২০১৪ সাল থেকে দেবহাটা উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নে স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। উক্ত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে চলমান ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টি কর্যক্রমের আওতায় সখিপুর ইউনিয়নের ০৯ টি ওয়ার্ডে ১০ জন স্বাস্থ্য পরিদর্শক কতৃক ৫৩৬৩ টি পরিবার ডিজিটাল জরিপ ও নিয়মিত স্বাস্থ্য চেকআপ (প্রাপ্তবয়স্ক ও বয়স্কদের বিপি পরিমাপ, ডায়বেটিস পরীক্ষা, বিএমআই পরীক্ষা এবং শিশুদের জিমপি পরীক্ষা) করা এবং এ সকল তথ্য সিমেড হেল্থ কতৃক প্রদত্ত সার্ভারে ট্যাবের মাধ্যমে স্বাস্থ্যতথ্য সংরক্ষণ করা হয়।
আমরা কাছাকাছি থেকে নিবিড়ভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোড়গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিরলসভাবে নিজস্ব ডিপ্লোমা চিকিৎসক দ্বারা স্ট্যাটিক ক্লিনিক – যা এখানে ও ফিল্ড পর্যায়ে পরিচালিত হয়। সরকারী হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার কর্তৃক স্যাটেলাইট ক্লিনিক এবং কনসাল্টেন্ট ডাক্তার দ্বারা ইউনিয়নে ০৪ টি স্বাস্থ্যক্যাম্প এবং ০১ টি চক্ষুক্যাম্পের মাধ্যমে সেবা প্রদান করে আসছি।
রোগীদেখার একপর্যায়ে সমৃদ্ধি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মনোজ কুমার হালদার এবং শামীমা খাতুন জানান, উনারা নিয়মিতভাবে সমৃদ্ধি ও প্রবীন কর্মসুচি অফিস থেকে এবং গ্রাম ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সমৃদ্ধি কেন্দ্রঘর থেকে স্ট্যাটিক ক্লিনিকের মাধ্যমে বিনামূল্যে ব্যবস্থাপত্র প্রদান করেন। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে স্যাটেলাইট ক্লিনিক, স্বাস্থ্যক্যাম্প, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী রেফার করেন।
এছাড়াও স্বাস্থ্য পরিদর্শকদের কার্যক্রম পরিদর্শন, ফিল্ডের অবস্থা পর্যালোচনা করে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে চিহ্নিত সমস্যার সমাধানে এজেন্ডা নির্বাচন ও ক্লাস্টার মিটিং এ স্বাস্থ্য পরিদর্শকদের সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান ও বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করেন।সেপ্টেম্বর ২০২৩ সাল পর্যন্ত স্ট্যাটিক ক্লিনিকের মাধ্যমে ৩১,৭২২ জন, স্যাটেলাইট ক্লিনিকের মাধ্যমে ১৭,২৬৩ জন, স্বাস্থ্যক্যাম্পের মাধ্যমে ৩৮৪১ জন, চক্ষুক্যাম্পর মাধ্যমে ১৫৬৬ জনকে সাধারণ সেবা হিসেবে ব্যবস্থাপত্র প্রদান ও ১৯৭ জন চক্ষুরোগীর ছানি অপারেশন করা হয়েছে।
সমৃদ্ধি ও প্রবীণ কর্মসূচির সকল পিআইইউ স্টাফদের সহযোগিতায় সমৃদ্ধি কর্মসূচি সমন্বয়কারী ওয়ালিদ হোসেন পিকেএসএফ ও সাসের উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ও স্বল্প খরচে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে চিকিৎসা খরচ কমানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ যেন সখিপুর বাসীর জন্য এক চরম সৌভাগ্য। আমি এ কর্মসূচির উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করি।
