আশাশুনি প্রতিনিধি : আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের রাজাপুর এক অসহায় ব্যক্তির জমি জবর দখল কেন্দ্রিক দু’পক্ষের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহত ১৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে উভয়পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিয়েছে। রোববার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে আনুলিয়া ইউনিয়নের রাজাপুর চৌরাস্তার মোড়ে আইয়ুব আলী গংদের পৈত্রিক জমি জবর দখল কেন্দ্রিক সংঘর্ষ শুরু হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, জায়গা জমি নিয়ে ক্রয় সূত্রে ইউপি সদস্য আল মামুন শহিদুল এবং পৈত্রিক সুত্রে আয়ুব আলী গংদের মধ্যে দীর্ঘদিন দ্ব›দ্ব, মারামারি ও হামলা-মামলা চলে আসছিল। এনিয়ে অসহায় আইয়ুব আলী গংদের কাফনের কাপড় পরে মানববন্ধন করা, থানা পুলিশ, জন প্রতিনিধি ও গ্রাম্য শালিস মিমাংসাও হয়েছে একাধিকবার।
কিন্তু পরবর্তীতে একপক্ষ না মেনে নেওয়ার পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে থাকে। বিরোধপূর্ণ স্থানে ইতোমধ্যেই মেম্বার শহিদুল কোন বাঁধা বিপত্তি না মেনে পাকা মার্কেট ভবন নির্মান কাজ করে চলেছেন। এরই জের ধরে ওইদিন ইউপি চেয়ারম্যানের শালিসে জমি মাপ জরিপ করার কথা ছিল। কিন্তু মাপ জরিপ তো দুরের কথা বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে দেশীয় অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
এতে আইয়ুব আলী গংদের পক্ষের কদম আলী শেখ, মইদুল মোড়ল, নুরুজ্জামান গাইন, সুরাইয়া খাতুন, হাসান গাজী, শিশু সাব্বির (৯), আয়ুব গাইন, মোশাররফ ঢালী, শাইনুর ঢালী, জামিনুর গাজী, খোরশেদ শিকারী, মুছা শিকারী, এছমাইল শাকারী, লাভলু গাজী, শাহিন সরদার, রহিম সরদার, আলম সরদার আহত হন। গুরুতর আহত ৭ জনকে আশাশুনি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ইউপি সদস্য আল মামুন শহিদুলের পক্ষের আনারুল সানা, মনিরুল সানা, মফিজুল, ছিদ্দিক সানা, আবু ছাইদ, শফিকুল সানা, সিরাজুল সরদার, আলা উদ্দিন সানা, মাছুরা খাতুন, হামিদা খাতুন, আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মেম্বার শহিদুল জানান, প্রতিপক্ষ শনিবার ঘরের কাজে বাঁধা দেয় এবং রোববার আ’লীগ অফিসে ভাংচুর করে। বাঁধা দিতে গেলে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে তাদের ৯ জনকে রক্তাক্ত জখম করে। তারা আইন আদালত মানেনা। অতর্কিত হামলা চালিয়ে ও ভাংচুর করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। খুন জখমের হুমকী দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
অপর পক্ষের হাসান গাজী, মনিরুল ইসলামসহ অনেকে জানান, মেম্বর শহিদুল পরিকল্পিত ভাবে জমি মাপ জরিপ না করে পাকা ভবন নির্মানের নিমিত্তে বহিরাগত লোকজন নিয়ে অস্ত্রে শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঘটনাস্থল ছাড়া বাহিরে তাদের লোকজনের উপর হামলা চালানো হয়েছে। ঘটনার সময় তাদের লোকজন মৎস্য ঘের থেকে বাড়ি ফেরার পথে মারপিট করায় সংঘর্ষের সুত্রপাত ঘটায়। খবর পেয়ে আমাদের লোকজন ঠেকাতে গেলে নির্মমভাবে মারপিট করে ১৭ জনকে আহত করে এবং ৩টি বসত বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি করে।
এমনকি শিশু সাব্বিরকে স্কুলে যাওয়ার পথে মারপিট করে জখম করে এবং গৃহবধু সুরাইয়া আত্মীয়ের বাড়ি থেকে বাড়ী ফেরার পথে জখম করে। এসময় তারা প্রকাশ্যে আওয়ামীলীগ অফিস ভাংচুর করে অন্যদের উপর দায় চাপিয়ে ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এমনকি মেম্বর পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মারাপিট করার জন্য অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দলীয় ও ভাড়াটিয়াদের আপ্যায়ন করার জন্য তার বাড়িতে খিচুড়ি রান্না করে লোকজন এক জায়গায় একত্রিত করে রাখে এবং তাদের জন্য পুর্বথেকে তৈরি করে রেখে পরিকল্পিত ভাবে আক্রমন চালানো হয় বলে তারা দাবী করেন।
আইয়ুব আলী গংরা জানান, জমি মাপ জরিপ না করে মসজিদ ব্যবহার করে সেখানে অস্ত্রশস্ত্র রাখা, সিসি ক্যামেরার তার আগে থেকে খুলে রাখা ও আমাদের জায়গায় মার্কেট নির্মান অব্যহত রাখাসহ আগে থেকে আ’লীগ অফিসের সাইন বোর্ড তুলে দিয়ে নিজেরাই ভাংচুর করে দোষ আমাদের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইউপি সদস্য শহিদুল ও তার পক্ষিয় লোকজন। সংঘর্ষের খবর পেয়ে আশাশুনি থানার এসআই এমরান হোসেন সঙ্গিয় ফোর্স নিয়ে দ্রæত ঘটনাস্থলে পৌছে উভয় পক্ষের লোকজন ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন ছিলো।
এব্যাপারে আশাশুনি থানা অফিসার ইনচার্জ মমিনুল ইসলাম জানান, মেম্বর শহিদুল ও আইয়ুব আলীর লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। উভয় পক্ষের লোকজন আহত হয়েছে এবং বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে বলে জেনেছি। এখনও পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি, পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্তমানে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলে জানান তিনি।