শহিদ জায়েদাসহ ভূমিহীন আন্দোলনের প্রয়াত নেতৃবৃন্দের স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত

সকাল ডেস্ক : ভূমিহীন আন্দোলনের প্রয়াত নেতা শহীদ জায়েদার ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৭ জুলাই) দুপুরে কালিগঞ্জের জায়েদানগর ফুটবল মাঠে দেবহাটা কালিগঞ্জ উপজেলা ভ‚মিহীন উচ্ছেদ প্রতিরোধ সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির আয়োজনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্মরণ সভায় শহিদ জায়েদার স্বামী আব্দুল হামিদ সভাপতিত্ব করেন।

প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্ঠা পরিষদের সদস্য, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি।

অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা জাতীয় পাটির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান আশু, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য লায়লা পারভীন সেঁজুতি, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বাবু, দেবহাটা উপজেলা চেয়ারম্যান আল ফেরদাউস আলফা, কালিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান সুমন, জায়েদার ছোট ছেলে আরমান এরশাদ, জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক এড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, জেলা নাগরিক কমিটি সদস্য সচিব ও সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এড. আবুল কালাম আজাদ, জেলা জাসদের সভাপতি ওবায়দুস সুলতান বাবলু, জেএসডির সুধাংশু শেখর সরকার, সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আনোয়ার জাহিদ তপন, জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. ওসমান গনি, জেলা সিপিবির সভাপতি আবুল হোসেন, জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি এড. আল মাহমুদ পলাশ, জেলা নাগরিক কমিটি যুগ্ম সদস্য সচিব আলিনুর খান বাবুল, জেলা বাসদের সমন্বয়ক নিত্যনন্দ সরকার, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ইদ্রিস আলী, উদীচীর সভাপতি শেখ সিদ্দিকুর রহমান, শ্রমিক নেতা রবিউল ইসলাম রবি, শহিদ জায়েদার ছেলে আলমগীর হোসেন আলম, নলতা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আনসার আলী, স্থানীয় ভ‚মিহীন নেতা আব্দুর রহিম প্রমুখ।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. সুব্রত ঘোষ, সদস্য নাজমুন নাহার মুন্নি প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

প্রধান অতিথি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি জায়েদাসহ প্রয়াত ভূমিহীন নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, যে সকল ভূমিহীনের জমির কাগজের সমস্যা আছে সেগুলো সমাধানের জন্য আমি ডিসি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশ দেব। তিনি দেশের বর্তমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে ভ‚মিহীনসহ সকল এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকার আহবান জানান।

তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন ধ্বংশের যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, তার বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, শহীদ জননী জায়েদা নিজের জীবন দিয়ে ভ‚মিহীনদের অধিকারের জন্য কাজ করে গেছেন। আপনাদের দাবি সরকার মেনে নিয়েছে। কাগজপত্রের সমস্যাগুলো উপজেলা চেয়ারম্যানরা সমাধান করবেন। অনেকে জমি পাননি। আর অনেকে পেলেও দলিল পাননি। খেলার মাঠসহ যে সকল সমস্যা আছে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা সবাই মিলে করবো।

শহীদ জননী জায়েদার রক্ত বৃথা যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন ভ‚মিদস্যুদের কাছ থেকে জমি উদ্ধার করতে হলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। মসজিদ, খেলার মাঠের উন্নয়নের জন্য জেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দ দেওয়া হবে।

সভায় এমপি আশরাফুজ্জামান আশু বলেন, ১৯৯৮ সালের এই দিনে ভূমিহীন আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে জায়েদা শহীদ হয়েছিলেন। সে সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ সাতক্ষীরায় এসেছিলেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ শহিদ জায়েদার একজন শিশুপুত্রকে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাকে মানুষের মতো মানুষ বানিয়ে তিনি তার কথা রেখেছেন।

তিনি আরও বলেন, ভূমিদস্যুদের কবল থেকে খাস জমি উদ্ধার করে ভূমিহীনদের মাঝে বণ্টন করা হবে। বিভিন্ন কারণে যারা জমি পাননি। আমরা আপনাদের পাশে দাড়াবো।

আপনাদের মধ্যে ভেদাভেদ থাকলে আপনারা এগুতে পারবেন না। আপনারা যারা আন্দোলন করছেন সবাই এক কাতারে আসুন। তাহলে আপনাদের দাবি আদায় হবে। আপনাদের জন্য আন্দোলন করে সাইফুল্লাহ লস্কর জীবন দিয়েছেন। তাকে যারা হত্যা করেছিলো তারা আজও ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের বিচার হয়নি। এড. আব্দুর রহিম, সাংবাদিক আনিসুর রহিম, আব্দুল গণিসহ অনেকে ভূমিহীনদের জন্য কাজ করেছেন। তারা আর আমাদের মাঝে নেই। তাদের কারণে আপনারা আজ ভালোভাবে বসবাস করতে পারছেন।

সভায় সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য লায়লা পারভীন সেঁজুতি বলেন, দীর্ঘ লড়াইয়ের মাধ্যমে আপনারা আপনাদের অধিকার ফিরে পেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা সে সময় আপনাদের ভ‚মি দিয়েছিলেন। এখনও তিনি সারাদেশে ভ‚মিহীন মানুষের জন্য কাজ করছেন। ভূমিহীনরা ঘরসহ জমি পেয়েছেন। যারা এখনো দলিল পাননি তারা সঠিক উপায়ে আবেদন করলে ভূমি পাবেন। আপনাদের এলাকার রাস্তা ঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দেশকে পিছনে নিয়ে যেতে একটি চক্র দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। আপনাদের ছেলে মেয়ে বিসিএস ক্যাডার হচ্ছে, ব্যাংকের চাকরি পাচ্ছে, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জমি দিয়েছিলেন বলে এটি হয়েছে। এখন ঐকবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। স্মরণসভায় আন্দোলনের নেতা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২৬ বছর আগে নারীরা ভ‚মিহীন আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এখন নারীরা ঘর থেকে বের হচ্ছে না।

এটি আমাদের জন্য দুঃখজনক। তখন নারীরা আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন। আজ নারীরা নেই। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে ছিলেন। তিনি খবর পেয়ে তাৎখনিক তৎকালীন ভ‚মিমন্ত্রীকে পাঠিয়েছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের সকল শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এই এলাকায় এসে আপনাদের পাশে দাড়িয়েছিলেন। দেবীশহর ফুটবল মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করে এখানে বসবাসকারীদের জমি দেওয়া হবে। তিনি সেটা করেছিলেন। সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ আপনাদের আন্দোলনে যোগদান করেছিলেন।

সে সময় সবার বাড়ি ছিল মাটির বাড়ি, এখন সবার বাড়ি পাকা। আপনারা সবাই সাবলম্বী হয়েছেন। ১২শ পরিবার ভ‚মি পেয়েছে। কিন্তু আপনারা আজ দ্বিধাবিভক্ত। এতে আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলাকে মরুভ‚মিতে পরিণত করা হয়েছে। বর্তমান সরকার অনেক উন্নয়ন করেছেন।

আন্দোলনের নামে যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে তারা মানুষের বন্ধু হতে পারে না। অনেকে উস্কানি দেবে, তাদের উস্কানি শুনে সরকারি সম্পদ ধ্বংসের কাজে যোগ দেওয়া যাবে না। ভূমিহীন জনপদের মানুষ কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ হবে না। সভা পরিচালনা করেন শেখ ফারুক। সভা শেষে দোয়া পরিচালনা করেন ভাঙ্গানমারী জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুর রউফ। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার ভ‚মিহীন নারী পুরুষ স্মরণসভায় অংশ নেন।