বিলাল হোসেন শ্যামনগর ব্যুরো : শ্যামনগরের উপকূলে টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে ৫০ শতাংশ মাছের ঘের, আমন ক্ষেতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে পানির নিচে ডুবে আছে আমন ক্ষেত। টানা তিন দিনে উপজেলায় ৩২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে ভেসে গেছে উপজেলার ৫০ শতাংশ মাছের ঘের। এর পাশাপাশি মাঠের আমন ধানসহ অন্য বিভিন্ন সবজি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে পানি জমে গ্রামীণ রাস্তার অবকাঠামোতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নাজুক হয়ে পড়েছে মাটি দিয়ে তৈরি ঘরবাড়ি। জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভেড়িবাঁধ। পানির নিচে ডুবে আছে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় উপাসানালার মাঠ। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মধ্যে গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, কাশিমাড়ি, কৈখালী, মুন্সিগঞ্জ,পদ্মপুকুর, ঈশ্বরীপুর,শ্যামনগর সদর, রমজাননগরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মাছের ঘের ও পুকুরও ভেসে গেছে পানিতে। সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিস জানান, সোমবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টাতেই শ্যামনগরের উপকূলে বৃষ্টি হয়েছে ১৪২ মিলিমিটার।
আজ সারাদিনও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বিশ্বজিৎ মন্ডল সহ একাধিক কৃষক বলেন, ‘সবচেয়ে বড় বিপদের কারণ হয়েছে মাছের ঘেরগুলো। জল বেশি হলে গলদা চিংড়ি আটকে রাখা যায় না। কোনো না কোনোভাবে পায়ে হেঁটে বের হয়ে যায়। আমাদের গ্রামের প্রায় শতভাগ ঘের এখন বিপদের মুখে আছে। অনেকগুলো এরমধ্যে ভেসে গেছে।’ এই কৃষক জানান, তাদের পরিবারের ১৯ বিঘা জমিতে সাধারণত আড়াই থেকে ৩০০ মন ধান হয় প্রতিবছর। কিন্তু এমন বিপর্যয়ের কারণে গত বছর তারা মাত্র ৩৯ মন ধান পেয়েছিলেন।
বিলের পানি নিষ্কাসনের ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আবারও এমন বিপদের আশঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, এলাকার স্লুইসগেটটি দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ ঠিকমতো জল ওঠানামা করতে পারছে না। তাছাড়া এই এলাকার আশেপাশের অন্তত ২০টি গ্রামের আমন চাষের জমি থেকে জল ঠিকমতো সরতে পারছে না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন, ৬৫০ হেক্টর আমন ধানের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
এছাড়া ১৩০ হেক্টর শীতকালীন সবজি চাষের জমি ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুষার মজুমদার জানান, টানা বৃষ্টিতে এ উপজেলায় ৩ হাজার ৫২০ হেক্টর জমির মধ্যে ৩ হাজার ৩০৬ টি মৎস ঘের পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ১১ কোটি টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। বেশি ক্ষতি হয়েছে গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, কাশিমাড়ি, কৈখালী, রমজাননগরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মাছের ঘের ও পুকুরও ভেসে গেছে পানিতে।
শ্যামনগর উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী পরকৌশলী ফরিদুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের১৪ টি পয়েন্টে জরাজীর্ণ অবস্থা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি থেমে গেলে ওই সব জরাজীর্ণ স্থানে আমরা কাজ শুরু করব।
উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা শাহিনুর আলম জানান, উপজেলায় ১৯১ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর মধ্যে ৫০ টি বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ পানির নিচে তলি আছে। মসজিদ-মাদ্রাসা সহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও একই অবস্থা।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আরিফুজ্জামান জানান, শ্যামনগরে টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উপকূলের মানুষ মৎস্য ও কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা এগুলো সমাধান করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।