নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় প্রথম বারের মত বাণিজ্যিক ভাবে আঙ্গুর চাষ সফল হয়েছে তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সুমন দাশ। ভারতের মহারাষ্ট্র এলাকার ব্লাক জাম্বু, সুপার মোনাকা, মানিকচমন ও বিএমডি জাতের আঙ্গুর চাষ করেছেন। আগামী অক্টবর মাস থেকে আঙ্গুর বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন এই কৃষি উদ্যোক্তা।
এদিকে সাথে সাথী ফসল হিসেবে আঙ্গুরের সঙ্গে সাড়ে আট হাজার ক্যাপসিকাম চাষ করেছেন। তিনি জানান, ইতিমধ্যে ক্যাপসিকাম বাজারজাত করা শুরু করেছে। এক‘দুদিন অন্তর ৪০০ থেকে ৪৫০ কেজি পর্যন্ত ক্যাপসিকাম বিক্রি করছেন।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার বারাত মির্জাপুর গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা সুমন দাশ জানান, স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরীর পাশাপাশি কৃষি নিয়ে কাছ করার ইচ্ছে অনেকদিনের। তবে তার চিন্তা ছিলো লাভজনক ফসল হিসেবে কি করা যায়?। এরপর গত বছরের জুলাই মাসে ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন চার প্রকার ৪৫০ আঙ্গুরের চারা। এসব আঙ্গুরের চারার মধ্যে রয়েছে ব্লাকজাম্বু, সুপারমোনাকা, মানিকচমন ও বিএমডি। দুই বিঘা পরিমান জমিতে এই আঙ্গুর চারা রোপন করে সঙ্গে দিয়েছেন সাথি ফসল হিসেবে সাড়ে আট হাজার সিনজেন্টা ইন্দিরা গোল্ড জাতের ক্যাপসিকাম চারা। তিনি বলেন, গত এক মাস যাবত ক্যাপসিকাম বিক্রি করা শুরু করেছেন।
এক দুই দিন পর পর ৪০০ থেকে ৪৫০ কেজি পর্যন্ত উত্তোলন করছেন। বাজারে প্রতি মন ৪ হাজার ৮০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, দুই বিঘা জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করতে এ পর্যন্ত তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা হয়েছে। গাছে যে পরিমান ফলন দেখা যাচ্ছে তাতে করে ১৫ থেকে ১৬ টন ক্যাপসিকাম চাষ উৎপাদন হতে পারে। তবে এখন বাজারে দামটা ভালো পাওয়া যাচ্ছে। কিন্ত কিছুদিন গেলে দাম কমে আসবে। তবে গড়ে প্রতি টন ৭০ হাজার টাকা দাম পাওয়া গেলেও অন্তত ১০ লাখ টাকা ক্যাপসিকাম চাষ বিক্রি হবে বলে আশা করছেন।
তিনি বলেন, মাত্র ৫ থেকে সাড়ে ৫ মাসের এই ফসলটি উৎপাদন করে ৭ টাকার উপরে লাভ হবে বলে আশা করছেন তিনি। এছাড়া আগামী অক্টবর মাস থেকে আঙ্গুর বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান তিনি। সাড়ে চার‘শ আঙ্গুর চারা ভারত থেকে নিয়ে এসেছে রোপনসহ অন্যান্য বাবদ এপর্যন্ত ৯ লাখ টাকার উপরে খরচ হয়েছে বলে জানান সুমন দাশ। তবে বছরে দুই মৌসুমে আঙ্গুর বিক্রি করা যায়। এরমধ্যে ফেব্রুয়ারী ও অক্টবর। তিনি বলেন, প্রথম বারে ৫০০ থেকে ৫৫০ কেজি আঙ্গুর উৎপাদন হতে পারে বলে ধারনা করছেন। এরপর থেকে প্রত্যেক মৌসুমে উৎপাদন বাড়তে থাকবে।
তিনি বলেন, একাধারে ২০ বছর পর্যন্ত ফলন দিতে পারে আঙ্গুর গাছে। প্রাপ্ত বয়স্ক একেকটি আঙ্গুর গাছ ৩০ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত ফলন দেয় বছরে। স্থানাীয় তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন জানান, কৃষক সুমন দাশ আঙ্গুর ও ক্যাপসিকাম চাষ করে বেশ সফল হয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি ক্যাপসিকাম উত্তোলন করে বিক্রি শুরু করেছেন। পাশাপাশি আঙ্গুর গাছগুলোও ভালো বেড়েছে। আগামী ৭/৮ মাস পর তার আঙ্গুরও বিক্রি করতে পারবেন বলে ধারনা করা হচ্ছে। এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকেও তাকে নানা ধরনের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বানিজ্যিক ভাবে আঙ্গুর চাষ এই প্রথম তালা উপজেলার বারাত গ্রামে শুরু করেছেন কৃষক সুমন দাশ। তিনি সফল হলে সাতক্ষীরার কৃষিতে নতুন সম্ভবনা তৈরী হবে আঙ্গুর চাষে। তার দেখাদেখি অনেকেই চিন্তা ভাবনা করছেন আঙ্গুর চাষে। তবে সাতক্ষীরাতে আরো দুই তিন বছর আগে থেকে কিছু কিছু এলাকাতে বানিজ্যিক ভাবে ক্যাপসিকাম চাষ হচ্ছে। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় ১৫ বিঘা পরিমান জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ হয়েছে। তবে ফসলটি বেশ লাভজনক বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট সাতক্ষীরা বিনেরপোতাস্থ কার্যালয়ের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শিমুল মন্ডল বণিক বার্তাকে জানান, বেলে দোআশ বা লালজাতীয় মাটিতে আঙ্গুর চাষ সম্ভব। তবে মাটির পিএইচ থাকতে হবে কম মাথায়। সেক্ষেত্রে ৪ এর কাছাকাছি হলে ভালো হয়। তবে প্রথম বাবের মত বানিজ্যিক ভাবে আঙ্গুর চাষ করে সফল হলে অব্যশই সাতক্ষীরার জন্য কৃষিতে নতুন সম্ভবনা বয়ে আনবে।