জি এম ফিরোজ উদ্দিন, মণিরামপুর : মনিরামপুরে মহাসড়ক গুলোতে যেন মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়েছে। গত দেড় মাসের ব্যবধানে উপজেলায় ১৫ জনের প্রাণ গেছে। তারপর আহত হয়েছেন কমপক্ষে অর্ধশত মানুষ। যে কারনে রাজারহাট-চুকনগর মহাসড়ক সংলগ্ন মনিরামপুরের বিভিন্ন মহাসড়ক লাগোয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী-অভিভাবক উদ্বিগ্ন ও আতংকিত হয়ে পড়েছেন। এমন আতংক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষও।
বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, গত দেড়মাসের ব্যবধানে বিভিন্ন মহাসড়কে কমপক্ষে ২০ টির অধিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার প্রায় ১৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। গত ৮ জানুয়ায়ী কালিবাড়ি-মনোহরপুর সড়কে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে রিয়াদ হোসেন (১৬) নামে এক ছাত্র নিহত হন। গত ১৪ জানুয়ারী রাজবাড়িয়ার ট্রলির সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে অনিমা দাস (১৭) নামে এক ছাত্রী নিহত হন।
গত ২০ জানুয়ারি একটি মাছবাহী পিকআপ সুন্দলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেটের সামনে দাড়িয়ে থাকা ইজিবাইককে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই চালক আব্দুল মজিদ নিহত হন। এ ঘটনার কয়েকদিন আগে গত ১১ ডিসেম্বর ওই বিদ্যালয়ের সামনে প্রায় একই জায়গায় ট্রাক চাপায় রিক্তা পারভীন (২৫) নামের এক গৃহবধূ নিহত হন।
এ দুর্ঘটনার কয়েকদিন আগে পিকআপ-মোটরসাইকেলের মূখোমুখি সংঘর্ষে কলেজ শিক্ষার্থী ফারজানা ইয়াসমিন রিমি ও মারুফ হোসেন নিহত হন। গত ১৫ ডিসেম্বর মহাসড়ক লাগোয়া সিটিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমূখী সংঘর্ষে তিন আরোহীর মধ্যে আসাবুর রহমান (১৭) নামের এক স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও হাফিজুর রহমান (৫৫) নিহত হন। গত ২৮ জানুয়ারি হাসপাতাল ও মহাসড়ক লাগোয়া বাধাঁঘাট সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ট্রাকচাপায় ভ্যানযাত্রী রূপা খাতুন (৪২) ও ভ্যান চালক মোসলেম উদ্দীন (৫৫) ঘটনাস্থলে নিহত হন।
সর্বশেষ গত ১লা জানুয়ারি হাকিমপুর বাবুর মোড় নামক স্থানে আব্দুর রশিদ গাইন (৫২) নিহত হন। যে কারনে রাজারহাট হতে চুকনগর মহাসড়কের মনিরামপুর অংশের শুরু কুয়াদা বাজার এবং শেষ ফকিররাস্তা বাজার। এরমধ্যে কুয়াদাহ স্কুল এন্ড কলেজ, টুনিয়াঘরা মহিলা আলিম মাদ্রাসা, সিটিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মনিরামপুর সরকারি কলেজ, প্রতিভা বিদ্যানিকেতন, মনিরামপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মনিরামপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজ, বাঁধাঘাট সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুন্দলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুন্দলপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আগরহাটি মহিলা আলিম মাদ্রাসা, নাগোরঘোপ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও চিনাটোলা মহিলা দাখিল মাদ্রাসাসহ কমপক্ষে ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই মহাসড়ক লাগোয়াশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী-অভিভাবক উদ্বিগ্ন ও আতংকিত হয়ে পড়েছেন।
প্রতিনিয়ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে একের পর এক দুর্ঘটনায় প্রানহাণির ঘটনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে ভয় পাচ্ছেন। আতংকিত অভিভাবকরা তার সন্তানদের বিদ্যালয় হতে নিয়ে অন্যত্রে ভর্তি করছেন। এ ব্যপারে সুন্দলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিগার সুলতানা জানান, রাস্তা পার হয়ে আসতে হয় বলে এমনিতেই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কম। তারওপর একের পর এক দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসছে না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে রাস্তা পারের অভয় দিয়েও কাজ হচ্ছে না। ইতোমধ্যে কয়েকজন অভিভাবক তাদের সন্তানদের অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করেছেন।
অভিভাবক মোহাম্মদ বাবুল আখতার বলেন, সড়কে যে হারে দুর্ঘটনা বেড়েছে তাতে সন্তানকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত চিন্তায় থাকতে হয়।
জানতে চাইলে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা) মনিরামপুর উপজেলা কমিটির সদস্য সচিব হাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমানে এ উপজেলা চরম দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে উঠেছে। এ কারণে সড়কে বেপরোয়া গতিতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রনসহ সড়কে আইন প্রয়োগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোরতা প্রদর্শনের বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন।
উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না বলেন, এ ব্যাপারে শুধু শিক্ষার্থী-অভিভাবক মহলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েনি, আমরা সড়ক দূর্ঘটনা প্রতিরোধে জন্য বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে ইতিমধ্যে কথা বলেছি। অচিরে এ ব্যাপারে একটি ভালো সিদান্ত আসতে পারে।