লিংকন আসলাম, আশাশুনি প্রতিনিধি : আশাশুনি উপজেলার বড়দল ও খাজরা ইউনিয়নের প্রায় দশ হাজার বিঘা এক ফসলের ধানের জমিতে জলাবদ্ধতার অভিশাপ হতে মুক্তি পেতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (৮ মার্চ) সকালে কালকী ও বামনডাঙ্গা স্লুইস গেটের উপর এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
বীরমুক্তিযোদ্ধা মাষ্টার আব্দুল ওহাব মোল্লার উদ্দ্যোগে, খাজরা ও বড়দল ইউনিয়নবাসীর আয়োজনে মোঃ জাহিদুল ইসলাম মোল্যার সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুল ইসলাম বাচ্চু, সাবেক ইউপি সদস্য বিমল কৃষ্ণ মন্ডল, অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর শিবু প্রসাদ মন্ডল, শিক্ষক দিনেশ চন্দ্র মন্ডল, দিলীপ কুমার সরকার প্রমুখ। মানববন্ধনে বক্তারা তাদের বক্তব্যে প্রায় এক বছর ধরে একাধিকবার মানববন্ধন, বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলে ও কোনো কাজ হয়নি বলে সচেতন মহলের দাবি। স্লুইস গেটের সামনে ও ভিতর থেকে পলি মাটি অপসারন না করা গেলে বড়দল ইউনিয়নের উত্তর বড়দলের আংশিক, মধ্যম বড়দলের সম্পুর্ন, পাঁচপোতা, দক্ষিণ বাইনতলা, মধ্যম বাইনতালা, মাদিয়া, হিতালবুনিয়া, লক্ষীখোলা ও মুরারিকাটির আংশিক এবং খাজরা ইউনিয়নের ফটিকখালী, খালিয়া, রাউতাড়া, পিরোজপুর, দূর্গাপুর, গজুয়াকাটি, চেউটিয়া গ্রাম ও বিলে হাজার হাজার বিঘা ধানের জমি ও মৎস্য ঘেরের পানি নিঃষ্কাশনের একমাত্র উপায় এই স্লুইস গেটটি ব্যবহার না করতে পেরে কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছে।
অনেকেই ফসল উৎপাদন না করতে পেরে এলাকা ছেড়ে ভারতে ও বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে ঢাকা সহ বিভিন্ন ইট ভাটায় চলে গেছে। বক্তারা আরোও বলেন দুই ইউনিয়নে তিনটি স্লুইস গেটের প্রধান কালকির গেটের বাইরে ও ভিতরে মাটি ভরাট হয়ে গেছে। আনুমানিক ২কিঃ মিঃ গেটের খাল সংস্কার করা প্রয়োজন।এছাড়া বামনডাঙ্গা ও মাদিয়া ব্রীজ সংলগ্ন ৩ কিঃ মিঃ পর্যন্ত পলি মাটি জমে গেছে।গত মৌসুমে পর্যাপ্ত বর্ষায় জলাবদ্ধ পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ ধারণ করে। অধিকাংশ চিংড়ি ঘেরের পানির আইল ডুবে যেয়ে একতা হয়ে যায়।
খাজরা ও বড়দল ইউনিয়নের ১৬ টি গ্রামের মানুষ কালকি গেটের কারনে ও পয়ঃ নিস্কাশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার কারনে সাপার করছে। ঐসময় গরুর খামার সহ পানিতে ডুবে লক্ষ লক্ষ টাকার সম্পদ নষ্ট হয়ে যায়। মৎস্য ঘেরের মাছ ঘেরে আটকে রাখতে মানুষ নিরুপায় হয়ে উচ্চ মূল্যে নেট কিনে ঘিরে মাছ রক্ষার চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি।তা ছাড়া গত মৌসুমে পর্যাপ্ত বর্ষায় জলাবদ্ধ পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ ধারণ করেছিলো তারপর থেকে প্রায় ১০ হাজার বিঘা জমির ধান ও ফসল উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।
স্লুইস গেটের সামনে পলি জমে পানি বের হতে না পারায় এ অবস্থা হয়েছিলো। বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণে এলাকা ফসলি জমি নষ্ট ও গ্রামের মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে থাকে। বসত ঘরে পানি ঢোকে, পথঘাট ডুবে যায়। জীবন জীবিকার তাগিদে মানুষ ঘর ছেড়ে চলে যায়। পুরো বড়দল ইউনিয়ন লবণ পানি মুক্ত, এখানে কোনো লোনা পানির মাছ চাষ হয় না। বর্ষা মৌসুমে বিলের ও গ্রামের পানি কপোতাক্ষ নদে নিষ্কাশন করা হয়ে থাকে। অন্য মৌসুমে অধিকাংশ জমি পতিত থাকে এবং এলাকায় ব্যাপকভাবে গবাদি পশুর চাষ হয়ে থাকে। এই বিল বর্ষা মৌসুম বাদে গবাদি পশুর চারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু এখন গবাদি পশু পালন করাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। মানববন্ধনে বক্তারা একমাত্র ধান চাষে জড়িত ইউনিয়ন বড়দল ও খাজরা ইউনিয়নের কৃষকরা তাদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে দুই ইউনিয়নের ৩টি গেটের সামনে ও ভিতরের পলি মাটি অপসারণ করে কৃষকরা পুনরায় ফসল উৎপাদন করতে পারে সেজন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।