স্পোর্টস ডেস্ক : মেয়েদের ফুটবলে আবারও শিরোপার আনন্দে মাতলো দেশ। নেপালকে ৩-০ গোলে হারিয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। লাল-সবুজের দলের হয়ে একটি করে গোল করেন শাহেদা আক্তার রিপা, অধিনায়ক সামসুন্নাহার জুনিয়র ও উন্নতি খাতুন। ৫ গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন অধিনায়ক শামসুন্নাহার।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে গোলের সহজ সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। বক্সের কাছে পৌঁছে যাওয়া সামসুন্নাহারের শটের আগমুহূর্তে পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে নেপালের গোলরক্ষক কবিতা বল ক্লিয়ার করেন। ফিরতি শটে ফাঁকা জালে বল জড়াতে পারেননি আকলিমা খাতুন।
পরের মিনিটে স্বপ্না রানীর কর্নার কিক থেকে আসা বল হেডে অল্পের জন্য জালে জড়াতে পারেননি মাহফুজা খাতুন। ম্যাচের ১৫ মিনিটে আহত হয়ে স্ট্রেচারে মাঠ ছাড়েন অঞ্জলি চাঁদ। মিনিট তিনেক পর সামসুন্নাহারের থেকে বল পেয়ে ডানপ্রান্ত দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন শাহেদা আক্তার রিপা, তিনি ক্রস করেন আকলিমাকে, কিন্তু বল প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক বিপদমুক্ত করেন। লিড পাওয়ার দারুণ সম্ভাবনা বাঘিনীদের সামনে এলেও তা আবারও কাজে আসেনি। প্রথম ২৫ মিনিটে বাংলাদেশ আক্রমণে অনেকটা এগিয়ে থাকলেও দুদলের কেউই গোছাল ফুটবল উপহার দিতে পারেনি।
৩২ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে রিপার বাড়ানো ক্রসে কেউ পা ছোঁয়াতে না পারায় গোলাম রব্বানি ছোটনের দল ফের বঞ্চিত হয়। নেপাল প্রথমবার সম্ভাবনা জাগায় ৩৫ মিনিটে, মমতা পুনের পাসে বল পাওয়া স্ট্রাইকার আমিশা কারকির শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তিন মিনিট পর রিপার নেয়া দূরপাল্লার দুরন্ত শট সামান্যের জন্য জালে ঢোকেনি। ম্যাচের ৪২ মিনিটে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
প্রতিপক্ষ রক্ষণে বারবার কাঁপন ধরানো রিপার ডানপায়ের দূরপাল্লার ম্যাজিক শটে অতিথি গোলরক্ষক কবিতা পুরোপুরি পরাস্ত হন। লিড পায় লাল-সবুজের দল। দুই মিনিট পর আমিশা বল নিয়ে বক্সে ছুটে যাওয়ার সময় সামনে এগিয়ে ঝাঁপিয়ে ঠেকান স্বাগতিক গোলরক্ষক রুপনা চাকমা। তখন আমিশা তার বাঁ-পায়ে বুটচাপা দেন। চোট পান রুপনা। বিরতির আগমুহূর্তে যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে আফ্রিদা খন্দকারের লম্বা পাসে বল পেয়ে অধিনায়ক সামসুন্নাহার ঠা-া মাথার ফিনিশিংয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন।
ট্রফির সুবাস পেতে থাকে বাংলাদেশ। ম্যাচের ৫০ মিনিটে সুনকালা রাই পায়ে বল লাগাতে না পারায় নেপাল গোল পায়নি। খানিকপর পাল্টা আক্রমণে আকলিমার কিক পা দিয়ে ঠেকান অতিথিদের কবিতা। বিরতির আগে দুবার চোট পেয়ে অল্প সময়ের জন্য মাঠ ছাড়া আকলিমাকে ৫৩ মিনিটে বেঞ্চে বসিয়ে আইরিন খাতুনকে মাঠে নামান ছোটন। খেলার ৫৬ মিনিটে কবিতাকে একা পাওয়া সামসুন্নাহারের ভলি থেকে বল পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়। এসময় বাংলাদেশ অধিনায়কের সাথে সংঘর্ষে কবিতা আঘাত পাওয়ায় খেলা বেশ খানিকক্ষণ বন্ধ থাকে।
৬৭ মিনিটে কবিতার বদলি হিসেবে নামেন লিলা যোশি। রিপা ৭৩ মিনিটে নিয়েছিলেন আরেকটি দূরপাল্লার শট। অল্পের জন্য পোস্টের পাশ দিয়ে বল চলে যায়। ম্যাচের সহজতম সুযোগটি ৭৯ মিনিটে নষ্ট করেন সামসুন্নাহার। নেপালের রক্ষণ অরক্ষিত হওয়ার সুযোগে গোলরক্ষক ছাড়া আর কেউ তার সামনে ছিল না। ঠিক সময়ে শট না নিয়ে তিনি বক্সে ঢুকে পড়ার পর লিলা বল সামনে ঝাঁপিয়ে ধরে ফেলেন।
পরের মিনিটে আমিশার শট চমৎকারভাবে রুপনা প্রতিহত করে বাংলাদেশের জাল অক্ষত রাখেন। ৮৭ মিনিটে বক্সের সামান্য বাইরে থেকে নেয়া এক ফ্রি-কিকে বদলি নামা উন্নতি খাতুনের আলতো টোকায় বল জালে জড়ায়, কমলাপুরের গ্যালারি উল্লাসে প্রকম্পিত হয়। যোগ করা সময়ের দুই মিনিটে সামসুন্নাহারের হেড অল্পের জন্য পোস্টের উপর দিয়ে গেলেও আক্ষেপ ঝরেনি। পরের মিনিটে সামসুন্নাহার বল জালে জড়ালে তা অফসাইডে বাতিল হয়। রেফারি শেষ বাঁশি বাজানোর সঙ্গে সঙ্গেই উল্লাসে ফেটে পড়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ।